ক্রয়-বিক্রয়ে স্বর্ণকার, তীর নির্মাতা, দরজী, তাঁতী ও কাঠমিস্ত্রির বর্ণনা

ক্রয়-বিক্রয়ে স্বর্ণকার, তীর নির্মাতা, দরজী, তাঁতী ও কাঠমিস্ত্রির বর্ণনা

ক্রয়-বিক্রয়ে স্বর্ণকার, তীর নির্মাতা, দরজী, তাঁতী ও কাঠমিস্ত্রির বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩৪, ক্রয় ও বিক্রয়, অধ্যায়ঃ (২৭-৩২)=৬টি

৩৪/২৭. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে শপথ করা অপছন্দনীয়।
৩৪/২৮. অধ্যায়ঃ স্বর্ণকারদের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে।
৩৪/২৯. অধ্যায়ঃ তীরের ফলক নির্মাতা ও কর্মকারের সম্পর্কে বর্ণনা।
৩৪/৩০. অধ্যায়ঃ দরজীদের সম্পর্কে বর্ণনা
৩৪/৩১. অধ্যায়ঃ তাঁতী সম্পর্কে বর্ণনা
৩৪/৩২. অধ্যায়ঃ কাঠমিস্ত্রিদের সম্পর্কে

৩৪/২৭. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে শপথ করা অপছন্দনীয়।

২০৮৮. আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বাজারে পণ্য আমদানী করে আল্লাহর নামে কসম খেল যে, এর এত দাম বলা হয়েছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কেউ বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য সে যেন কোন মুসলিমকে পণ্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আয়াত অবতীর্ণ হয়,

إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে”- (আল-ইমরান ৭৭)।

৩৪/২৮. অধ্যায়ঃ স্বর্ণকারদের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে।

তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মক্কার কাঁচা ঘাস কাটা যাবে না। আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, কিন্তু ইযখির ঘাস ব্যতিত। কেননা তা মক্কাবাসীদের কর্মকারদের ও তাদের ঘরের কাজে ব্যবহৃত হয়। নাবী(সাঃআঃ) বলেন, আচ্ছা ইযখির ঘাস ব্যতিত।

২০৮৯. হুসাইন ইবনু আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বর্ণনা করেন, আলী (রাদি.) বলেছেন, (বদর যুদ্ধের) গনীমতের মাল হইতে আমার অংশের একটি উটনী ছিল এবং নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর খুমুস্ হইতে একটি উটনী আমাকে দান করিলেন। যখন আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কন্যা ফাতিমা (রাদি.) এর সঙ্গে বাসর রাত যাপনের ইচ্ছা করলাম সে সময় আমি কায়নুকা গোত্রের একজন স্বর্ণকারের সাথে এই চুক্তি করেছিলাম যে, সে আমার সঙ্গে (জঙ্গলে) যাবে এবং ইযখির ঘাস বহন করে আনবে এবং তা স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তার মূল্য দ্বারা আমার বিবাহের ওয়ালীমার ব্যবস্থা করব।

২০৯০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (মক্কা বিজয়ের দিন) বলেন, আল্লাহ তাআলা মক্কায় (রক্তপাত) হারাম করে দিয়েছেন। আমার আগেও কারো জন্য মক্কা হালাল করা হয়নি এবং আমার পরেও কারো জন্য হালাল করা হইবে না। আমার জন্য শুধুমাত্র দিনের কিছু অংশে মক্কায় (রক্তপাত) হালাল হয়েছিল [৫]। মক্কার কোন ঘাস কাটা যাবে না, কোন গাছ কাটা যাবে না। কোন শিকারকে তাড়ানো যাবে না। ঘোষণাকারী ব্যতিত কেউ মক্কার জমিনে পড়ে থাকা মাল উঠাতে পারবে না। আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাদি.) বলিলেন, কিন্তু ইযখির ঘাস, যা আমাদের স্বর্ণকারদের ও আমাদের ঘরের ছাদের জন্য ব্যবহৃত তা ব্যতীত। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ইযখির ঘাস ব্যতিত। রাবী ইকরাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তুমি জানো শিকার তাড়ানোর অর্থ কী? তা হল, ছায়ায় অবস্থিত শিকারকে তাড়িয়ে তার স্থানে নিজে বসা। আবদুল ওয়াহহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বলেছেন, আমাদের স্বর্ণকারদের জন্য ও আমাদের কবরের জন্য।

[৫] নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্য মক্কাকে একদিনের কিছু সময়ের জন্য হালাল করা হয়েছিল- মক্কা বিজয়ের দিন।

৩৪/২৯. অধ্যায়ঃ তীরের ফলক নির্মাতা ও কর্মকারের সম্পর্কে বর্ণনা।

২০৯১. খাব্বাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলীয়্যাতের যুগে আমি কর্মকারের পেশায় ছিলাম। আস ইবনু ওয়াইলের কাছে কিছু পাওনা ছিল আমি তার কাছে তাগাদা করিতে গেলে সে বলিল, যতক্ষণ তুমি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-কে অস্বীকার না করিবে ততক্ষণ আমি তোমাকে তোমার পাওনা দিব না। আমি বললাম, আল্লাহ তোমাকে মৃত্যু দিয়ে তারপর তোমাকে পুনরুত্থিত করা পর্যন্ত আমি তাঁকে অস্বীকার করব না। সে বলিল, আমি মরে পুনরুত্থিত হওয়া পর্যন্ত আমাকে অব্যাহতি দাও। শীগ্‌গীরই আমাকে সম্পদ ও সন্তান দেয়া হইবে, তখন আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করব। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হলঃ

‏أَفَرَأَيْتَ الَّذِي كَفَرَ بِآيَاتِنَا وَقَالَ لأُوتَيَنَّ مَالاً وَوَلَدًا * أَطَّلَعَ الْغَيْبَ أَمِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا ‏

“তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে আমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হইবেই”-

(মারইয়াম ৭৭-৭৮)।

৩৪/৩০. অধ্যায়ঃ দরজীদের সম্পর্কে বর্ণনা

২০৯২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক দরজী খাবার তৈরী করে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে দাওয়াত করিলেন। আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সামনে রুটি এবং ঝোল যাতে লাউ ও গোশতের টুকরা ছিল, পেশ করিলেন। আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখিতে পেলাম যে, পেয়ালার কিনারা হইতে তিনি লাউয়ের টুকরা খোঁজ করে নিচ্ছেন। সেদিন হইতে আমি সব সময় লাউ ভালবাসতে থাকি।

৩৪/৩১. অধ্যায়ঃ তাঁতী সম্পর্কে বর্ণনা

২০৯৩. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মহিলা একটি বুরদা আনলেন। [সাহল (রাদি.)] বলিলেন, তোমরা জান বুরদা কী? তাকে বলা হয়, হ্যাঁ, তা হল এমন চাদর, যার পাড় বুনানো। মহিলা বলিলেন, হ্যাঁ আল্লাহর রাসুল! আপনাকে পরিধান করানোর জন্য আমি এটি নিজ হাতে বুনে নিয়ে এসেছি। নাবী (সাঃআঃ) তা গ্রহণ করিলেন এবং তাহাঁর এটির প্রয়োজন ছিল। তারপর তিনি তা তহবন্দরূপে পরিধান করে আমাদের সামনে এলেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে একজন বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তা আমাকে পরিধান করিতে দিন। তিনি বলিলেন, আচ্ছা। নাবী (সাঃআঃ) কিছুক্ষণ মজলিসে বসে পরে ফিরে গেলেন। তারপর চাদরটি ভাঁজ করে সে লোকটির কাছে পাঠিয়ে দিলেন। লোকজন সে ব্যক্তিকে বলিলেন, তুমি ভাল করো নি, তুমি তাহাঁর কাছে চাদরটি চেয়ে ফেললে, অথচ তুমি জান যে, তিনি কোন যাঞ্চনাকারীকে ফিরিয়ে দেন না। সে লোকটি বলিলেন, আল্লাহর কসম, আমি চাদরটি এ জন্যই চেয়েছি যে, তা যাতে আমার মৃত্যুর পর আমার কাফন হয়। রাবী সাহল (রাদি.) বলেন, সেটি তার কাফন হয়েছিল।

৩৪/৩২. অধ্যায়ঃ কাঠমিস্ত্রিদের সম্পর্কে

২০৯৪,আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কিছু লোক সাহল ইবনু সাদ (রাদি.)-এর কাছে এসে মিম্বরে নাবী (সাঃআঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একজন (আনসারী) মহিলা- সাহল (রাদি.) যার নাম উল্লেখ করেছিলেন- তার কাছে তিনি সংবাদ পাঠালেন যে, তোমার সূত্রধর গোলামকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠ দিয়ে একটি (মিম্বর) তৈরি করে দেয়। লোকদের সাথে কথা বলার সময় যার উপর আমি বসতে পারি। সে মহিলা তাকে গাবা নামক স্থানের কাঠ দিয়ে মিম্বর বানানোর নির্দেশ দিলেন। তারপর গোলামটি তা নিয়ে এল এবং সে মহিলা এটি আল্লাহর রাসু.

২০৯৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একজন আনসারী মহিলা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর নিকট আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি আপনার জন্য এমন একটি জিনিস বানিয়ে দিব না, যার উপর আপনি বসবেন? কেননা, আমার একজন কাঠমিস্ত্রি গোলাম আছে। তিনি বলিলেন, যদি তুমি তা চাও। বর্ণনাকারী বলিলেন, তারপর সে মহিলা তাহাঁর জন্য মিম্বর তৈরি করিলেন। যখন জুমুআর দিন হলো, নাবী (সাঃআঃ) সেই তৈরি মিম্বারের উপরে বসলেন। সে সময় যে খেজুর গাছের কান্ডের উপর ভর দিয়ে তিনি খুতবা দিতেন, সেটি এমন ভাবে চীৎকার করে উঠল, যেন তা ফেটে পড়বে। নাবী (সাঃআঃ) নেমে এসে তা নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন। তখন সেটি ফোঁপাতে লাগল, যেমন ছোট শিশুকে চুপ করানোর সময় ফোঁপায় [৬]। অবশেষে তা স্থির হয়ে গেল। (রাবী বলেন) খেজুর কাণ্ডটি যে যিক্‌র-নসীহত শুনত, তা হারানোর কারণে কেঁদেছিল।

[৬] আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “পৃথিবীতে আর আকাশসমূহে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর প্রশংসা কীর্তন করে”। সকল জড় পদার্থের মধ্যে চেতনা বিদ্যমান। আল্লাহ যখন ইচ্ছে করেন কেবল তখনই আমরা এসব জড় পদার্থের চেতনা সম্পর্কে জানতে পারি। খেজুর গাছের কান্ডের কান্ড এরই একটা উদাহরণ।

By ইমাম বুখারী

এখানে কুরআন শরীফ, তাফসীর, প্রায় ৫০,০০০ হাদীস, প্রাচীন ফিকাহ কিতাব ও এর সুচিপত্র প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্ন/পরামর্শ/ ভুল সংশোধন/বই ক্রয় করতে চাইলে আপনার পছন্দের লেখার নিচে মন্তব্য (Comments) করুন। “আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়” -বুখারি ৩৪৬১। তাই এই পোস্ট টি উপরের Facebook বাটনে এ ক্লিক করে শেয়ার করুন অশেষ সাওয়াব হাসিল করুন

Leave a Reply