রাঃসাঃ এর অনুসারীদের কিছু কারামত তাহাঁর নবুওয়তের প্রমাণ
রাঃসাঃ এর অনুসারীদের কিছু কারামত তাহাঁর নবুওয়তের প্রমাণ << নবুওয়তের মুজিযা হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন
সাঁইত্রিশতম পরিচ্ছেদ – রাঃসাঃ এর অনুসারীদের কিছু কারামত তাহাঁর নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে অন্যতম।
এটা রাঃসাঃ এর নবুওয়তের প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কেননা রাঃসাঃ এর অনুসরণ ব্যতীত কাউকে কারামত দান করা হয় না। আর সবচেয়ে বড় কারামত হলো বান্দাহকে কিতাব ও সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করা ও শেষ পরিণাম ভাল হওয়া।
আবু হুরাইরা রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাঃসাঃ দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসাবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন এবং আসিম ইবনু সাবিত আল-আনসারীকে তাদের দলপতি নিযুক্ত করেন। যিনি আসিম ইবনু উমর ইবনু খাত্তাবের মাতামহ ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা হয়ে গেলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের কাছে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দু`শত তীরন্দাজ ব্যক্তিকে তাদের পশ্চাদপনে প্রেরণ করে। এরা তাহাঁদের চিহৃ অনুসরণ করে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদীনা থেকে সাথে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াসরিবের খেজুর। এরপর এরা তাঁতের পদচিহৃ অনুসরণ করে চলতে লাগল। যখন আসিম ও এ সাথীগণ তাদের দেখলেন, তখন তাহাঁর একটি উচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। আর কাফিরগণ তাহাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাহাঁদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিযে, তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে আমরা হতা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আসিম ইবনু সাবিত রাদি. আনহু বলিলেন, `আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষআলতে আপনার নাবীকে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিন।` অবশেষে কাফিরগণ তীর নিক্ষপ করতে শুরু করল আর তারা আসিম রাদি. আনহুসহ সাতজনকে শহীদ করল। এরপর অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনসারী, যায়দ ইবনু দাসিনা রাদি. আনহু ও অপর একজন তাদের দেয় প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করিলেন। যখন কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে [সেই রশি দিয়ে] তাহাঁদের বেধে ফেললো। তখন তৃতীয়জন বলে উঠলেন, `সূচনাতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাথে যাবো না, আমি তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব, যারা শাহাদাত বরণ করেছে।` কাফিরগণ তাঁকে তাদের সঙ্গে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন। তখন তারা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাই ও ইবনু দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এ বদর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কথা। তখন খুবাইবকে হারিস ইবনু আমিরের পুত্রগণ ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব রাদি. আনহু হারিস ইবনু আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব রাদি. আনহু কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইবনু শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাকে উবাইদুল্লাহ ইবনু আয়ায অবহিত করেছেন, তাঁকে হারিসের কন্যা জানিয়ে যে, যখন হারিসের পুত্রগণ খুবাইব রাদি. আনহু।কে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তাহাঁর নিকট থেকে ক্ষৌর কাট সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিসের কন্যা তাকে এক খানা ক্ষুর ধার দির। [সে বলেছে] সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহেরা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বলিলেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনোমি তা করবো না। [হারিসের কন্যা বলল] আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের ন্যায় উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ! আমি একদিন দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় আঙ্গুর ছড়া থেকে খাচ্ছেন, যা তার হাতেই ছিল। অথচ এ সময় মক্কায় কোনো ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিসের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তা`আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবাইবকে দান করেছেন। এরপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে হেরেম থেকে হিল্লের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব রাদি. আনহু তাদের বলিলেন, আমাকে দু`রাকাআত নামায আদায় করতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দান করল। তিনি দু`রাকাআত নামায আদায় করে নিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, `তোমরা যদি ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি নামাযকে দীর্ঘায়িত করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধবংশ করুন।` তারপর তিনি এ কবিতা দু`টি আবৃত্তি করিলেন,
“যখন আমি মুসলিম হিসাবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোনরূপ ভয় করি না। আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন, [তাতে আমার কিছু যায় আসে না]। আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা`আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।“
অবশেষে হারিসের পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্তুত যে মুসলিম বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয় তার জন্য দু`রাকাত নামায আদায়ের এ রীতি খুবাইব রাদি. আনহুই প্রবর্তন করে গেছেন। যেদিন আসিম রাদি. আনহু শাহাদাত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা`আলা তাহাঁর দো`আ কবুল করেছিলেন। সেদিনই রাঃসাঃ তাহাঁর সাহাবাগণকে তাহাঁদের সংবাদ ও তাহাঁদের উপর যা` যা` আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানে হয় যে, আসিম রাদি. আনহুকে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাহাঁর নিকট এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করে, যাতে সে ব্যক্তি তাহাঁর মরদেহ থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়োসে। যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর যুদ্ধের দিন আসিম রাদি. আনহু কুরাইশদের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আসিমের মরদেহের [হেফাজতের জন্য] মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিক হল [এই মৌমাছিরা] তাহাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করল। ফলে তারা তাহাঁর দেহে হতে কোনো এক টোকরা গোশত কেটে নিতে সক্ষম হয়নি।[1]
আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, উষ্ট্রযুদ্ধের দিন যুবাইর রাদি. আনহু যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাহাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বলিলেন, হে পুত্র! আজকের দিন জালিম অথবা মাজলুম ব্যতীত কেউ নিহত হবে না। আমার মনে হয়, আমি আজ মাজলুম হিসেবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে বেশি চিন্তিত। তুমি কি মনে কর যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদে কিছু অবশিষ্ট থাকবে? তারপর তিনি বলিলেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋন পরিশোধ করে দিও। তিনি এক তৃতীয়াংশের ওসীয়্যাত করেন। আর সেই এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ ওসীয়াত করেন তাহাঁর [আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রের] পুত্রদের জন্য তাহাঁর অর্থাৎ আবদুল্লাহ, তিনি বলিলেন, এক তৃতীয়াংশকে এক তৃতীয়াংশে বিভক্ত করবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্ধৃত্ত থাকে, তবে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য। হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহুর কোনো কোন পুত্র যুবাইর রাদি. আনহুর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন খুবায়েদ ও আববাদ। আর মৃত্যুকালে তাহাঁর নয় পুত্র ও নয় কন্যা ছিল। আবদুল্লাহ রাদি. আনহু বলেন, তিনি আমাকে তাহাঁর ঋণ সম্পর্কে ওসীয়্যাত করেছিলেন এবং বলেীছলেন, হে পুত্র! যদি এ সবের কোনো বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার মাওলার সাহায্য চাইবে। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারি নি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে পিতা! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আবদুল্লাহ রাদি. আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাহাঁর ঋণ আদায়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবাইরের মাওলা! তাহাঁর পক্ষ থেকে তাহাঁর ঋণ আদায় করে দিন। আর তাহাঁর করয শোধ হয়ে যেত। এরপর যুবাইর রাদি. আনহু শহীদ হলেন এভং তিনি নগদ কোনো দীনার রেখে যাননি আর না কোনো দিরহাম। তিনি কিছু জমি রেখে যান যার মধ্যে একটি হল গাবা। আরো রেখে যান মদীনায় এগারোটি বাড়ী, বসরায় দু`টি, কূফায় একটি ও মিসরে একটি। আবুদল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলেন, যুবায়র রাদি. আনহুর ঋণ থাকার কারণ এই ছিল যে, তাহাঁর নিকট কেউ যখন কোনো মাল আমানত রাখতে আসতো তখন যুবাইর রাদি. আনহু বলতেন, না, এভাবে নয়` তুমি তা আমার কাছে ঋণ হিসাবে রেখে যাও। কেননা, আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুবাইর রাদি. আনহু কখনো কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোনো কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অবশ্যই তিনি রাঃসাঃ এর সঙ্গী হয়ে অথবা আবূ বকর, উমর ও উসমান রাদি. আনহুমের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলেন, তারপর আমি তাহাঁর ঋণের পরিমাণ হিসাব করলাম এবং দেখলাম তাহাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, সাহাবী হাকিম ইবনু হিযাম রাদি. আনহু আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহুর সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেন, হে ভাতিজা। বল তো আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি তা প্রকাশ না বলিলেন, এক লাখ। তখন হাকিম ইবনু হিযাম রাদি. আনহু বলিলেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হতে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন আবুদল্লাহ ইব্ন যুবাইর রাদি. আনহু তাকে বলিলেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কি ধারণা করেন? হাকীম ইবনু হিযাম রাদি. আনহু বলিলেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এ সামর্থ রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে সক্ষম হও, তবে আমার সহযোগীতা গ্রহণ করবে। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলেন, যুবাইর রাদি. আনহু গাবাস্থিত ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাজারে কিনেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু তা ষোল লাখের বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবাইর রাদি. আনহুর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হবে। তখন আবদুল্লাহ ইবনু জাফর রাদি. আনহু তাহাঁর নিকট এলেন। যুবাইর রাদি. আনহুর নিকট তাহাঁর চার লাখ পাওনা ছিল। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহুকে বলিলেন, তোমরা চাইলে আমি তা তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলিলেন, না। আবদুল্লাহ ইবনু জাফর রাদি. আনহু বলিলেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অমত্মর্ভুক্ত করতে পার। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলিলেন, না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু জাফর রাদি. আনহু বলিলেন, তবে আমাকে এক টুকরা ভূমি দাও। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলিলেন, এখান থেকে ওখান পর্যাপ্ত জমি আপনার। রাবী বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু গাবার জমি থেকে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাহাঁর নিকট গাবার জমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। তারপর তিনি মু`আবিয়া রাদি. আনহুর কাছে এলেন। সে সময় তাহাঁর কাছে আমরা ইবনু উসমান, মুনযির ইবনু যুবাইর ও আবদুল্লাহ ইবনু যাম`আ রাদি. আনহুম উপস্থিত ছিলেন। মু`আবিয়া রাদি. আনহু তাঁকে বলিলেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বলিলেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কত অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ রাদি. আনহু বলিলেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলিলেন, আমি এক অংশ এক লাখে নিলাম। আমর ইবনু উসমান রাদি. আনহু বলিলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আর আবদুল্লাহ ইবনু যাম`আ রাদি. আনহু বলিলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মু`আবিয়া রাদি. আনহু বলিলেন, আর কি পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলিলেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মু`আবিয়া রাদি. আনহু বলিলেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু জাফর রাদি. আনহু তাহাঁর অংশ মু`আবিয়া রাদি. আনহুর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। তারপর যখন ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু তাহাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে সারলেন, তখন যুবাইর রাদি. আনহুর পুত্ররা বলিলেন, আমাদের মীরাস ভাগ করে দিন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাদি. আনহু বলিলেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হজ্জ মৌসুমে এ ঘোষণা প্রচার না করি যে, যদি কেউ যুবাইর রাদি. আনহুর কাছে ঋণ পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের কাছে আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হজ্জের মৌসুমে ঘোষণা প্রচার করেন। তারপর যখন চার বছর অতিবাহিত হল, তখন তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবাইর রাদি. আনহুর চার স্ত্রী ছিলেন। এক তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হল। প্রত্যেক স্ত্রী বার লাখ করে পেলেন। আর যুবাইর রাদি. আনহুর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দু`লাখ ছিল।[2]
বার`আ ইবনু আযিব রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী [উসায়দ ইবনু হুযায়ব রাদি. আনহু] [রাত্রি কালে] `কোরআনের সুরা আল-কাহফ` তিলাওয়াত করছিলেন। তাহাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন [আতঙ্কিত হয়ে] লাফালাফি করতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ্র দরবারে দো`আ করিলেন। তারপর তিনি দেখতে পেলেন, একখন্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে ফেলেছে। তিনি নাবী রাঃসাঃ এর দরবারে বিষয়টি আলোচনা করিলেন। তিনি বলিলেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করতে থাকবে। ইহা তো সাকীনা [প্রশান্তি] ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।[3]
`উমর রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি এ বলে দো`আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরন করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের শহরে দাও । ইবনু যুরায়`ই [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]… হাফসা বিনত উমর রাদি. আনহুমা হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি `উমর রাদি. আনহুকে অনু্রূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যাইদ তাহাঁর পিতার সূত্রে হাফসা রাদি. আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি `উমর রাদি. আনহুকে বলতে শুনেছি। [4]
আবূ সাঈদ খুদরী রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বনী কুরাইযার ইয়াহূদীরা সা`দ ইবনু মু`আয রাদি. আনহুর মীমাংসায় দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন রাঃসাঃ তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তখন তিনি ঘটনাস্থলের নিকটই ছিলেন। তখন সা`দ রাদি. আনহু একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি নিকটবর্তী হলেন, তখন রাঃসাঃ বলিলেন, তোমরা, তোমাদের নেতার প্রতি দন্ডায়মান হও।` তিনি এসে রাঃসাঃ এর নিকট বসলেন। তখন তাঁকে বলিলেন, `এরা তোমার মীমাংসায় সম্মত হয়েছে। [কাজেই তুমিই তাদের ব্যাপারে ফয়সালা কর]।` সা`দ রাদি. আনহু বলেন, `আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের মধ্যে থেকে যুদ্ধ করতে সক্ষমদেরকে হত্যা করা হবে এবং মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হবে।` রাঃসাঃ বলিলেন, `তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা`আলার ফয়সালার অনুরূপ ফয়সালাই করেছ।[5]
আয়েশা রাদি. আনহা হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সা`দ রাদি. আনহু আহত হয়েছিলেন। কুরাইশ গোত্রের হিব্বান ইবনু ইরকা নামক এক ব্যক্তি তাহাঁর উভয় বাহুর মধ্যবর্তী রগে তীর বিদ্ধ করেছিল। কাছে থেকে তার শুশ্রূষা করার জন্য নাবী রাঃসাঃ মসজিদে নববীতে একটি খিমা তৈরি করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ খন্দকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে যখন হাতিয়ার রেখে গোসল সমাপন করিলেন তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম তাহাঁর মাথার ধূলোবালি ঝাড়তে ঝাড়তে রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর কাছে উপস্থিত হলেন এবং বলিলেন, আপনি তো হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি এখনও তা রেখে দেই নি। চলুন তাহাঁদের প্রতি। নাবী রাঃসাঃ তাঁকে জিজ্ঞাসা করিলেন কোথায়? তিনি বনী কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ বনূ কুরায়যার মহল্লায় এলেন। পরিশেষে তারা রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর ফয়সালা মেনে নিয়ে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এল। কিন্তু তিনি ফয়সালার ভার সা`দ রাদি. আনহুর উপর অর্পণ করিলেন। তখন সা`দ রাদি. আনহু বলিলেন, তাদের ব্যাপারে আমি এই রায় দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হবে, নারী ও সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন-সম্পদ [মুসলিমদের মধ্যে] বন্টন করে দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমার পিতা [উরওয়া রাদি. আনহু] আয়েশা রাদি. আনহা থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, সা`দ রাদি. আনহু [বনূ কুরায়যার ঘটনার পর] আল্লাহর কাছে এ বলে দো`আ করছিলেন, হে আল্লাহ্! আপনি তো জানেন, যে সম্প্রদায় আপনার রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছে আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে কোনো কিছুই আমার কাছে অধিক প্রিয় নয়। হে আল্লাহ্! আমি মনে করি [খন্দক যুদ্ধের পর] আপনি তো আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন তবে এখনো যদি কুরাইশদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ বাকী থেকে থাকে তাহলে আমাকে সে জন্য বাঁচিয়ে রাখুন, যেন আমি আপনার রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারি। আর যদি যুদ্ধে অবসান ঘটিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত করুন এবং এতেই আমার মৃত্যু ঘটান। এরপর তাহাঁর ক্ষত স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে তা প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনী গিফার গোত্রের একটি তাঁবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে আসতে দেখে তারা ভীত হয়ে বলিলেন, হে তাঁবুবাসীগণ আপনাদের দিক থেকে এসব কি আমাদের দিকে বয়ে আসছে? পরে তাঁরা দেখলেন যে, সা`দ রাদি. আনহুর ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবশেষে এ জখমের কারণেই মারা যান।[6]
আনাস রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, আনাসের ফুফু রুবাঈ জনৈক বাঁদির সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকেরা ক্ষমা প্রার্থী হলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দীয়াত পেশ করা হল, তখন তা তারা গ্রহণ করল না। অগত্যা তারা রাঃসাঃ এর সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু বাঁদির লোকেরা কিসাস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। রাসূরুল্লাহ রাঃসাঃ কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবনু নযর রাদি. আনহু নিবেদন করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! রুবাঈয়ের সামনে দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হবে? না যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাহাঁর শপথ, তাহাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তখন রাঃসাঃ বলিলেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবই কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাঁদির সম্প্রদায় রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈকে ক্ষমা করে দেয়। তখন রাঃসাঃ বলিলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যিনি আল্লাহর নামে শপথ করেন, আল্লাহ তা পূরণ করেন।[7]
আনাস ইবনু মালিক রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, উমর ইবনু খাত্তাব রাদি. আনহু অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব রাদি. আনহুর উসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দো`আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! [প্রথমে] আমরা আমাদের রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর উসিলা দিয়ে দো`আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর চাচার উসিলা দিয়ে দো`আ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দু`আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হতো। [8]
আবদুর-রাহমান ইবনু আবূ বকর রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত যে, আসহাবে সুফফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। [একদা] নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, যার কাছে দু`জনের আহার আছে সে যেন [তাহাঁদের থেকে] তৃতীয়জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজন সঙ্গে নিয়ে যায়। আবূ বকর রাদি. আনহু তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রাহমান রাদি. আনহু বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবূ বকর রাদি. আনহুর ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা [এই তিনজন সদস্য] ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি না? আবূ বাকর রাদি. আনহু রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর ঘরেই রাতের আহার করেন এবং ইশার নামায পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সালাতের পর তিনি আবার [রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর ঘরে] ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহ্র ইচ্ছায় কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ী ফিরলে তাহাঁর স্ত্রী তাঁকে বলিলেন, মেহমানদের কাছে আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] মেহমান থেকে। আবূ বকর রাদি. আনহু বলিলেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বলিলেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। তিনি [রাগান্বিত হয়ে] বলিলেন, ওরে বোকা এবং ভৎসনা করিলেন। আর [মেহমানদের] বলিলেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ্র কসম! আমি এ কখনই খাব না। আবদুর রাহমান রাদি. আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা লুকমা উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ আগের চাইতে অধিক খাবার রয়ে গেল। আবূ বকর রাদি. আনহু খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখেতে পেলেন তা আগের সমপরিমাণ কিংবা তার চাইতেও বেশী। তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে বলিলেন, হে বনূ ফিরাসের বোন। এ কি? তিনি বলিলেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন আগের চাইতে তিনগুন বেশী! আবূ বকর রাদি. আনহুও তা থেকে আহার করিলেন এবং বলিলেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। এরপর তিনি আরও লুকমা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নাবী রাঃসাঃ এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর সেখানেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে সে সন্ধি ছিল তার সময়সীমা পূর্ন হয়ে যায়। [এবং তারা মদীনায় আসে] আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহ্ই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য থেকে আহার করেন। [রাবী বলেন] কিংবা আবদুর রাহমান রাদি. আনহু যে ভাবে বর্ণনা করেছেন।[9]
আবু আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ রাদি. আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিংগা ধ্বনি করে লোকদের সালাতের জন্য একত্র করার নির্দেশ প্রদান করেন। তখন একদা আমি স্বপ্নে দেখি যে, এক ব্যক্তি শিংগা হাতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে বলি, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি শিংগা বিক্রয় বরবে? সে বলে, তুমি শিংগা দিয়ে কি করবে? আমি বলিলাম, আমি তার সাহায্যে সালাতের জামা`আতে লোকদের ডাকব। সে বলল, আমি কি এর চেয়ে উত্তম কোনো সন্ধান তোমাকে দেব না? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। রাবী বলেন, তখন সে বলল, তুমি এইরূপ শব্দ উচ্চারণ করবে,
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্;
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্;
হাইয়া আলাসসালাহ, হাইয়া আলাসসালাহ,
হাইয়া আলাল-ফালাহ্, হাইয়া আলাল-ফালাহ্,
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্।”
রাবী রলেন! অতঃপর ঐ স্থান হতে ঐ ব্যক্তি একটু দুরে সরে গিয়ে দাঁড়ায় এবং বলে- তুমি যখন নামায পড়তে দাঁড়াবে তখন বলবে,
“আল্লাহু আকরার, আলাহু আকবার;
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্; আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্;
হাইয়া আলাসসালাহ; হাইয়া আলাল-ফালাহ্;
কাদ কামাতিসসালাহ; কাদ কামাতিসসালাহ,
আলাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”।
অতঃপর ভোর বেলা আমি রাঃসাঃ এর খিদমতে হাযির হয়ে তাহাঁর নিকট আমার স্বপ্নের বর্ণনা করি। নাবী রাঃসাঃ বলেন এটা অবশ্যই সত্য স্বপ্ন। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি বিলালকে ডেকে তোমার সাথে নাও এবং তুমি যেরূপ স্বপ্ন দেখেছ- তদ্রুপ তাকে শিক্ষা দাও যাতে সে [বিলাল] ঐরূপে-আযান দিতে পারে। কেননা তাহাঁর কন্ঠস্বর তোমার স্বরের চাইতে অধিক উচ্চ। অতঃপর আমি বিলাল রাদি. আনহুকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়াই এবং তাকে আযানের শব্দগুলি শিক্ষা দিতে থাকি এবং তিনি উচ্চারণ পূর্বক আযান দিতে থাকেন। বিলালের এই আযান ধ্বনি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদি. আনহু নিজ আবাসে বসে শুনতে পান। তা শুনে উমার রাদি. আনহু এত দ্রুত পদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদ্মতে আগমন করেন যে, তাহাঁর গায়ের চাদর মাটিতে হেচঁড়িয়ে যাচ্ছিলো। তিনি নাবী রাঃসাঃ এর দরবারে উপস্হিত হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য নাবী হিসাবে প্রেরণ করেছেন, আমিও ঐরূপ স্বপ্ন দেখেছি যেরূপ অন্যরা দেখেছে রাঃসাঃ বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য- [ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, মুসলিম]।
ইমাম আবু দাউদ [রহঃ] বলেন, সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যাব ও আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়েদের সূত্রে ইমাম যুহুরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতেও এইরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। যুহরী থেকে ইবনু ইসহাকের সূত্রে “আল্লাহু আকবার, চারবার উল্লেখ আছ। যুহরী থেকে মা`মার ও ইউনুসের সূত্রে “আল্লাহু আকবার” দুই বার উল্লেখ আছে, তাঁরা চারবার উল্লেখ করেননি।[10]
হকের উপর কায়েম থাকা সবচেয়ে বড় কারামত এটা অলীদের কারামতের মধ্যে শামিল করার কারণ।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাঃসাঃ বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি গর্বের সাথে পরিহিত কাপড় টাকনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার প্রতি রহমতের নযর করবেন না। এ শুনে আবূ বকর রাদি. আনহু বলিলেন, আমার অজ্ঞাতসারে কাপড়ের একপাশ কোনো কোন সময় নীচে নেমে যায়। রাঃসাঃ বলেন, তুমি তো গর্বের সাথে তা করছ না। মূসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, আবদুল্লাহ রাদি. আনহু কি `যে ব্যক্তি তার লুঙ্গী ঝুলিয়ে চলল` বলিয়াছেন? সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি।[11]
এটা আবূ বকর রাদি. আনহুর হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারামত।
আবূ সালামা [র.] বলেন, নাবী রাঃসাঃ এর সহধর্মিণী আয়িশা রাদি. `আনহা আমাকে বলিয়াছেন, [রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর মৃত্যুর খবর পেয়ে] আবূ বক্র রাদি. `আনহু `সুন্হ`-এ অবস্থিত তাহাঁর বাড়ি থেকে ঘোড়ায় চড়ে চলে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করিলেন। সেখানে লোকদের সাথে কোনো কথা না বলে আয়িশা রাদি. `আনহার ঘরে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর দিকে অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একখানি `হিবারাহ` ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। আবূ বক্র রাদি. `আনহু রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর মুখমণ্ডল উম্মুক্ত করে তাহাঁর উপর ঝুকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন, তারপর কাঁদতে লাগলেন এবং বলিলেন, ইয়া নাবী আল্লাহ্! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আল্লাহ্ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্রিত করবেন না। তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা তো আপনি কবুল করেছেন। আবূ সালামা [র.] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদি. `আনহু আমাকে খবর দিয়েছেন যে, [তারপর] আবূ বক্র রাদি. `আনহু বেরিয়ে এলেন। তখন উমর রাদি. `আনহু লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। আবূ বক্র রাদি. `আনহু তাঁকে বলিলেন, বসে পড়ুন। তিনি তা মানলেন না। আবূ বক্র রাদি. `আনহু তাঁকে বলিলেন, বসে পড়ুন, তিনি তা মানলেন না। তখন আবূ বক্র রাদি. `আনহু কালিমা-ই-শাহাদাতের দ্বারা [বক্তব্য] আরম্ভ করিলেন। লোকেরা উমর রাদি. `আনহুকে ছেড়ে তাহাঁর দিকে আকৃষ্ট হন। আবূ বক্র রাদি. `আনহু বলিলেন…… আম্মা বা`দু, তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ রাঃসাঃ এর ইবাদত করতে, মুহাম্মদ রাঃসাঃ সত্যই ইন্তিকাল করেছেন। আর যারা মহান আল্লাহ্র ইবাদত করতে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ চিরঞ্জিব, অমর। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন, “মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র…. শাকিরীন” পর্যন্ত। [কোরআনের সুরা আলে ইমরান: ১৪৪] আল্লাহ্র কসম, মনে হচ্ছিল যেন আবূ বক্র রাদি. `আনহুর তিলাওয়াত করার পূর্ব পর্যন্ত লোকদের জানাই ছিল না যে, আল্লাহ্ এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াতখানি তার কাছ থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ঐ আয়াত তিলাওয়াত করতে শোনা গেল।[12]
ইবরাহীম তায়মী রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যে, আমরা হুযায়ফা রাদি. `আনহুর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলো, হায়, আমি রাঃসাঃ কে পেতাম, তবে তাহাঁর সঙ্গে মিলে একত্রে যুদ্ধ করতাম এবং-তাতে কোনরূপ পিছপা হতাম না।” হুযায়ফা রাদি. `আনহু বলিলেন, হয়তো তা তুমি তাই করতে কিন্তু আমি তো আহযাবের রাতে রাঃসাঃ এর সঙ্গে ছিলাম। [-সে রাতে”] প্রচন্ড বায়ু ও তীব্র শীত আমাদের কাবু করে ফেলেছিল। এমনি সময় রাঃসাঃ ঘোষণা করিলেন, ও হে! এমন কেউ আছে কি? যে আমাকে শক্রর খবর এনে দেবে আল্লাহর তা`আলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে [মর্যাদার আসনে] রাখবেন?- আমরা তখন চুপ করে রইলাম এবং আমাদের মধ্যে কেউ তার সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার বলিলেন, “ও হে! এমন কোনো ব্যক্তি আছে কি” যে আমাকে শক্রপক্ষের খবর এনে দেবে, আল্লাহ তা`আলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে রাখবেন” এবারও আমরা চুপ রইলাম আর আমাদের মধ্যে কেউ তাহাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার ঘোষণা করিলেন, ওহে! এমন কেউ আছে কি যে আমাকে শক্র পক্ষের খবর এনে দেবে , আল্লাহ তা`আলা তাকে কিয়ামতের দিন তাকে আমার সঙ্গে রাখবেন এবারও আমরা চুপ করে রইলাম এবং আমাদের কেউ তাহাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এবার তিনি বলিলেন, হে হুযায়ফা ওঠো এবং তুমি শক্র পক্ষের খবর আমাদের এনে দাও। রাঃসাঃ যখন এবারা আমার নাম ধরেই ডাক দিলেন, তাই উঠা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলনা। এবার তিনি বলিলেন, “শক্রপক্ষের খবর আমাকে এনে দাও, কিন্তু সাবধান তাদের আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করোনা। তারপর আমি যখন তাহাঁর নিকট থেকে প্রস্থান করলাম, তখন মনে মনে আমি যেন উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে চলেছি। এভাবে আমি তাদের [শক্রপক্ষের] নিকটে পৌছে গেলাম। তখন আমি লক্ষ্য করলাম আবু সুফিয়ান আগুনের দ্বারা তাহাঁর পিঠে ছেক দিচ্ছেন। আমি তখন একটি তীর ভুলে ধনুকে সংযোজন করলাম এবং তা নিক্ষেপ করতে মনস্হ করলাম এমন সময় আমার মনে পড়ে গেল যে, রাঃসাঃ বলে দিয়েছেন, “তাদেরকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে-তূলোনা।……আমি যদি তখন তীর নিক্ষেপ করতাম তবে তীর নির্ঘাৎ লক্ষ্যভেদ করতো। অগত্যা আমি ফিরে আসলাম এবং ফিরে আসার সময়ও উষ্ণতার মধ্য দিয়ে অতিক্রমের মতো উষ্ণতা “অনুভব করলাম। তারপর যখন ফিরে এলাম, তখন প্রতিপক্ষের খবর তাঁকে প্রদান করলাম। আমার দায়িত্ব পালন, করে অবসর হতেই আবার আমি শীতের তীব্রতা অনুভব করলাম। তখন রাঃসাঃ তাহাঁর অতিরিক্ত একটি জামা দিয়ে আমাকে আবৃত করে দিলেন যা তিনি সাধারণত নামায আদায়ের সময় গায়ে দিতেন। তারপর আমি ভোর পর্যন্ত একটানা নিদ্রায় আচ্ছন্ন রইলাম। যখন ভোর হল তখন তিনি বলিলেন, হে গভীর নিদ্রামগ্ন! এখন উঠে পড়ো।[13]
[1] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩০৪৫।
[2] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩১২৯।
[3] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৬১৪।
[4] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ১৮৯০।
[5] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩০৪৩।
[6] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৪১২২।
[7] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৪৫০০।
[8] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ১০১০।
[9] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬০২।
[10] আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৪৯৯।
[11] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৬৬৫।
[12] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ১২৪১।
[13] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৭৮৮।