ছবি অঙ্কনকারী ও কসম সম্পর্কে
অধ্যায়ঃ ৬১ ছবি অঙ্কনকারী বা চিত্র শিল্পীদের পরিণাম
অধ্যায়ঃ ৬২ অধিক কসম সম্পর্কে শরিয়তের বিধান
অধ্যায়ঃ ৬৩ আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের জিম্মাদারী সম্পর্কিত বিবরণ
অধ্যায়ঃ ৬৪ আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে কসম করার পরিণতি
অধ্যায়ঃ ৬৫ সৃষ্টির কাছে আল্লাহর সুপারিশ করা যায় না
অধ্যায়ঃ ৬৬ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম কর্তৃক
অধ্যায়ঃ ৬৭ মানুষ আল্লাহ তাআলার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা নিরুপনে অক্ষম
৬১তম অধ্যায়ঃ ছবি অঙ্কনকারী বা চিত্র শিল্পীদের পরিণাম
১। আবু হুরায়রা রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে ব্যক্তি আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করতে চায়। তাদের শক্তি থাকলে তারা একটা অনু সৃষ্টি করুক অথবা একটি খাদ্যের দানা সৃষ্টি করুক অথবা একটি গমের দানা তৈরী করুক।” [বুখারি ও মুসলিম]
২। আয়েশা রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“কেয়ামতের দিন সবচেয়ে শাস্তি পাবে তারাই যারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির মতো ছবি বা চিত্র অঙ্কন করে।” [বুখারি ও মুসলিম]
৩। ইবনে আব্বাস রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামকে বলতে শুনেছি,
“প্রত্যেক চিত্র অঙ্কনকারীই জাহান্নামী। চিত্রকর যতটি {প্রাণীর} চিত্র এঁকেছে ততটি প্রাণ তাকে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে।” [মুসলিম]
৪। ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে ‘মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে,
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন {প্রাণীর} চিত্র অঙ্কন করবে, কিয়ামতের দিন তাকে ঐ চিত্রে আত্মা দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে আত্মা দিতে সক্ষম হবে না।” [বুখারি ও মুসলিম]
৫। আবুল হাইয়াজ হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আলী রাদি. আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে এমন কাজে পাঠাবোনা, যে কাজে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? সে কাজটি হচ্ছে, ‘তুমি কোন চিত্রকে ধ্বংস না করে ছাড়বে না। আর কোন উচু কবরকে {মাটির} সমান না করে ছাড়বে না।, [মুসলিম]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। চিত্রকরদের ব্যাপারে খুব কঠোরতা অবলম্বন।
২। কঠোরতা অবলম্বনের কারণ সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করে দেয়া। এখানে কঠোরতা অবলম্বনের কারণ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে আদব রক্ষা না করা। এর প্রমাণ আল্লাহ বাণী ঃ
৩। সৃষ্টি করার ব্যাপারে আল্লাহর কুদরত বা সৃজনশীল ক্ষমতা। অপরদিকে সৃষ্টির ব্যাপারে বান্দার অক্ষমতা। তাই আল্লাহ চিত্রকরদেরকে বলিয়াছেন, ‘তোমাদের ক্ষমতা থাকলে তোমরা একটা অনু অথবা একটা দানা কিং গমের দানা তৈরী করে নিয়ে এসো।’
৪। চিত্রকরের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হওয়ার সু¯পষ্ট ঘোষণা।
৫। চিত্রকর যতটা {প্রাণীর} ছবি আকবে, শাস্তি ভোগ করার জন্য ততটা প্রাণ তাকে দেয়া হবে। এবং এর দ্বারাই জাহান্নামে তাঁহাকে শাস্তি দেয়া হবে।
৬। অঙ্কিত ছবিতে রূহ বা আত্মা দেয়ার জন্য চিত্রকরকে বাধ্য করা হবে।
৭। {প্রাণীর} ছবি পাওয়া গেলেই তা ধ্বংস করার নির্দেশ।
৬২তম অধ্যায়ঃ অধিক কসম সম্পর্কে শরিয়তের বিধান
১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“তোমাদের শপথসমূহকে তোমরা হেফাজত করো”। [মায়েদা : ৮৯]
২। আবু হুরায়রা রাদি. হইতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামকে একথা বলতে শুনেছি,
“{অধিক} শপথ, সম্পদ বিনষ্ট কারী এবং উর্পন ধ্বংশ কারী।” [বুখারি ও মুসলিম]
৩। সালমান রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“তিন শ্রেণীর লোকদের সাথে আল্লাহ তাআলা {কেয়ামতের দিন} কথা বলবেন না, তাদেরকে {গুনাহ মাফের মাধ্যমে} পবিত্র করবেন না, বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে, বৃদ্ধ জিনাকারী, অহংকারী গরীব, আর যে ব্যক্তি তার ব্যবসায়ী পণ্যকে খোদা বানিয়েছে অর্থাৎ কসম করা ব্যতী সে পণ্য ক্রয়ও করে না, কসম করা ব্যতীত পণ্য বিক্রয়ও করেনা।” [তাবরানী]
৩। ইমরান বিন হুসাইন রাদি. হইতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে আমার যুগ, তারপর উত্তম হচ্ছে তাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তারা। তারপর উত্তম হচ্ছে তাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তারা”। ইমরান বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম তাঁহার পরে দু’যুগের কথা বলিয়াছেন নাকি তিন যুগের কথা বলিয়াছেন তা আমি বলতে পারছিনা। অতঃপর তিনি {রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম} বলেন, ‘তোমাদের পরে এমন কওম আসবে যারা সাক্ষ্য দিবে, কিন্তু তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ যোগ্য হবে না। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে, আমানত রক্ষা করবে না। তারা মান্নত করবে, কিন্তু তা পূর্ণ করবে না। আর তাদের শরীরে চর্বি দেখা দিবে।” [বুখারি]
৪। ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্নিত আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আমার যুগের মানুষ। এরপর উত্তম হলো এর পরবর্তীতে আগমনকারী লোকেরা। তারপর উত্তম হলো যারা তাদের পরবর্তীতে আসবে তারা। অতঃপর এমন এক জাতির আগমন ঘটবে যাদের কারো সাক্ষ্য কসমের আগেই হয়ে যাবে, আবার কসম সাক্ষ্যের আগেই হয়ে যাবে।” {অর্থাৎ কসম ও সাক্ষের মধ্যে কোন মিল থাকবে না। কসম ও সাক্ষ্য উভয়টাই মিথ্যা হবে।}
ইবরাহীম নখয়ী বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য আমাদের অভিভাবকগণ শাস্তি দিতেন।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। ঈমান রক্ষা করার জন্য উপদেশ দান।
২। মিথ্যা কসম বানিজ্যিক পণ্যের ক্ষতি টেনে আনে, কামাই রোজগারের বরকত নষ্ট করে।
৩। যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম ছাড়া ক্রয় বিক্রয় করেনা তার প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ।
৪। স্বল্প কারণেও গুনাহ বিরাট আকার ধারণ করতে পারে, এ ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারণ।
৫। বিনা প্রয়োজনে কসম কারীদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন।
৬। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম কর্তৃক তিন অথবা চার যুগ বা কালের লোকদের প্রশংসা জ্ঞাপন এবং এর পরবর্তীতে যা ঘটবে তার উল্লেখ।
৭। মিথ্যা সাক্ষ্য ও ওয়াদার জন্য সালাফে সালেহীন কর্তৃক ছোটদেরকে শাস্তি প্রদান।
৬৩ তম অধ্যায়ঃ আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের জিম্মাদারী সম্পর্কিত বিবরণ
১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“আল্লাহর নামে যখন তোমরা কোন শক্ত ওয়াদা করো তখন তা পুরা করো এবং দৃঢ়তার সাথে কোন কসম করলে তা ভঙ্গ করোনা। [নাহর: ৯১]
২। বুরাইদাহ রাদি. হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম ছোট হোক, বড়হোক {কোন যুদ্ধে} যখন সেনাবাহিনীতে কাউকে আমীর বা সেনাপতি নিযুক্ত করতেন, তখন তাকে ‘তাকওয়ার’ উপদেশ দিতেন এবং তার সাথে যে সব মুসলমান থাকতো তাদেরকেও উত্তম উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেন,
“তোমরা আল্লাহর নামে যুদ্ধ করো। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো। তোমরা যুদ্ধ করো, কিন্তু বাড়াবাড়ি করোনা, বিশ্বাস ঘাতকতা করোনা। তোমরা শত্র“র নাক-কান কেটোনা বা অঙ্গ বিকৃত করোনা। তুমি যখন তোমার মুশরিক শত্র“দের মোকাবেলা করবে, তখন তিনিটি বিষয়ের দিকে তাদেরকে আহ্বান জানাবে। যে কোন একটি বিষয়ে তারা তোমার আহ্বানে সাড়া দিলে তা গ্রহণ করে নিও, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করে দিও। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করো। যদি তারা তোমার আহ্বানে সাড়া দেয়, তাহলে তাদেরকে গ্রহণ করে নিও। এরপর তাদেরকে তাদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে দারুল মুহাজিরীনে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য হিজরত করার জন্য আহ্বান জানাও। হিজরত করলে তাদেরকে একথা জানিয়ে দাও, ‘মুহাজিরদের জন্য যে অধিকার রয়েছে, তাদেরও সে অধিকার আছে, সাথে সাথে মোহাজিরদের যা করণীয় তাদেরও তাই করণীয়। আর যদি তারা হিজরতের মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদেরকে বলে দিও যে, তারা গ্রাম্য সাধারণ মুসলিম বেদুঈনদের মর্যাদা পাবে। তাদের উপর আল্লাহর হুকুম আহকাম {বিধি- নিষেধ} জারি হবে। তবে ‘গনিমত’ বা যুদ্ধ-লব্ধ অতিরিক্ত সম্পদের ভাগ তারা মুসলমানদের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ ব্যতীত পাবে না। এটাও যদি তারা অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ‘তারা কর দিতে সম্মত কিনা। যদি কর দিতে সম্মত হয়, তবে তা গ্রহণ করো, আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করো। কিন্তু যদি কর দিতে তারা অস্বীকার করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।
তুমি যদি কোন দুর্গের লোকদেরকে অবরোধ করো, আর দূর্গের লোকেরা যদি তখন চায় যে, তুমি তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের জিম্মায় রেখে দাও, তবে তুমি কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের জিম্মায় রেখোনা বরং তোমার এবং তোমার সঙ্গী সাথীদের জিম্মায় রেখে দিও। কারণ, আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের জিম্মাদারী রক্ষা করার চেয়ে তোমার এবং তোমার- সাথীদের জিম্মাদারী রক্ষা করা অনেক সহজ। তুমি যদি কোন দূর্গের অধিবাসীদেরকে অবরোধ করো। আর তুমি আল্লাহর ফয়সালার ব্যাপারে তাদের কথায় সম্মতি দিওনা। বরং তোমার নিজের ফয়সালাতে দিও। কারণ তুমি জাননা তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালার ক্ষেত্রে তুমি সঠিক ভূমিকা নিতে পারবে কিনা।” [মুসলিম]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় ঃ
১। আল্লাহর জিম্মা, নবীর জিম্মা এবং মোমিনদের জিম্মার মধ্যে পার্থক্য।
২। দু’টি বিষয়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বিপদজনক বিষয়টি গ্রহণ করার প্রতি দিক নির্দেশনা।
৩। আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা।
৪। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
৬। আল্লাহর হুকুম এবং আলেমদের হুকুমের মধ্যে পার্থক্য।
৭। সাহাবি কর্তৃক প্রয়োজনের সময় এমন বিচার ফয়সালা হয়ে যাওয়া যা আল্লাহর সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা তাও তিনি জানেন না।
৬৪ তম অধ্যায়ঃ আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে কসম করার পরিণতি
১। জুনদুব বিন আব্দুল¬াহ রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“এক ব্যক্তি বললো, “আল্লাহর কসম, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহর তাআলা বললেন, ‘আমি অমুককে ক্ষমা করবোনা’ একথা বলে দেয়ার আস্পর্ধা কার আছে? আমি তাকেই ক্ষমা করে দিলাম। আর তোমার {কসম কারীর} আমল বাতিল করে দিলাম।” [মুসলিম]
আবু হুরায়রা রাদি. হইতে বর্ণিত হাদীসে আছে, “যে ব্যক্তি কসম করে উল্লে¬খিত কথা বলেছিলো, সে ছিলো একজন আবেদ। আবু হুরায়রা বলেন ঐ ব্যক্তি একটি মাত্র কথার মাধ্যমে তাঁহার দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়টাই বরবাদ করে ফেলেছে।
আলোচিত অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় ঃ
১। আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে মাতব্বরী করার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা। {অর্থাৎ মাতব্বরী না করা}
২। আমাদের কারো জাহান্নাম তার জুতায় ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী।
৩। জান্নাতও অনুরূপ নিকটবর্তী।
৪। এ অধ্যায়ে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, একজন লোক মাত্র একটি কথার মাধ্যমে তার দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ করে ফেলেছে।
৫। কোন কোন সময় মানুষকে এমন সামান্য কারণেও মাফ করে দেয়া হয়, যা তার কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়
৬৫তম অধ্যায়ঃ সৃষ্টির কাছে আল্লাহর সুপারিশ করা যায় না
১। জুবাইর বিন মুতয়িম রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর কাছে আরব বেদুঈন এসে বললো, ‘ হে আল্লাহর রসুল, আমাদের জীবন ওষ্ঠাগত, পরিবার পরিজন ক্ষুধার্ত, সম্পদ ধ্বংস প্রাপ্ত। অতএব আপনি আপনার রবের কাছে বৃষ্টির প্রার্থনা করুন। আমরা আপনার কাছে আল্লাহর সুপারিশ করছি, আর আল্লাহর কাছে আপনার সুপারিশ করছি’। এভাবে তিনি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে লাগলেন যে তাঁহার এবং সাহাবায়ে কেরামের চেহারায় রাগতবাব প্রতিভাত হচ্ছিল। অতঃপর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম বললেন,
“তোমার ধ্বংস হোক, আল্লাহর মর্যাদা কত বড়, তা কি তুমি জানো? তুমি যা মনে করছো আল্লাহর মর্যাদা ও শান এর চেয়ে অনেক বেশী। কোন সৃষ্টির কাছেই আল্লাহর সুপারিশ করা যায় না।” [আবু দাউদ]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়
১। ‘আপনার কাছে আল্লাহর সুপারিশ করছি’نستشفع بالله عليك
এ কথা যে ব্যক্তি বলেছিল, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম কর্তৃক সে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।
২। সৃষ্টির কাছে আল্লাহর সুপারিশের কথায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এবং সাহাবায়ে কেরামের চেহারায় লক্ষণীয় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল।
৩। نستشفع بك على الله { আমরা আল্লাহর কাছে আপনার সুপারিশ কামনা করছি} এ কথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম প্রথ্যাখ্যান করেননি।
৪। “সুবহানাল¬াহ’ এর তাফসিরের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন।
৫। মুসলমানগণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামকে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাওয়ার জন্য আবেদন করতেন।
৬৬ তম অধ্যায়ঃ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম কর্তৃক তাওহীদ সংরক্ষণ এবং শিরকের মূলোৎপাটন
১। আবদুল¬াহ বিন আশশিখখির রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বনী আমেরের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর নিকট গেলাম। আমরা তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, أنت سيدنا {আপনি আমাদের প্রভু} তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম বললেন, ألسيد الله {আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন প্রভু}। আমরা বললাম, ‘আমাদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আমাদের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ও ধৈর্যশীল।’ এরপর তিনি বললেন,
“তোমরা তোমাদের বলে যাও। শয়তান যেন তোমাদের উপর সওয়ার না হতে পারে।” [আবু দাওদ]
২। আনাস রাদি. হইতে বর্ণিত্ াছে, কতিপয় লোক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামকে লক্ষ্য করে বললো, “হে আল্লাহর রসুল, কে আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি, এবং আমাদের প্রভূ তনয়” তখন তিনি বললেন,
হে লোক সকল, তোমরা তোমাদের কথা বলে যাও। শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করতে না পারে। আমি হচ্ছি মুহাম্মদ, আল্লাহর বান্দা এবং তার রসুল। আল্লাহ তাআলা আমাকে যে মর্যাদার স্থানে অধিষ্টিত করিয়াছেন, তোমরা এর উর্ধ্বে আমাকে স্থান দিবে এটা আমি পছন্দ করি না। [নাসায়ী]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। দ্বীনের ব্যাপারে সীমা লংঘন না করার জন্য মানুষের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ।
২। ‘আপনি আমাদের প্রভূ বা মনিব’ বলে সম্বোধন করা হলে জবাবে তার কি বলা উচিৎ, এ ব্যাপারে জ্ঞান লাভ।
৩। লোকেরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর প্রতি সম্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে কিছু কথা বলার পর তিনি বলেছিলেন, “শয়তান যে তোমাদের উপর চড়াও না হয়।” অথচ তারা তাঁহার ব্যাপারে হক কথাই বলেছিল। এর তাৎপর্য অনুধান করা।
৪। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর বাণী ما أحب أن ترفعونى فوق منـزلتى অর্থাৎ তোমরা আমাকে স্বীয় মর্যাদার উপরে স্থান দাও এটা আমি পছন্দ করিনা। একথার তাৎপর্য উপলব্ধি করা।
৬৭তম অধ্যায়ঃ মানুষ আল্লাহ তাআলার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা নিরুপনে অক্ষম
১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা নিরুপন করতে পারেনি। কেয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁহার হাতের মুঠোতে থাকবে।” [ঝুমার : ৬৭]
২। ইবনে মাসউদ রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একজন ইহুদী পন্ডিত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এর নিকট এসে বললো, ‘হে মুহাম্মদ, আমরা {তাওরাত কিতাবে} দেখতে পাই যে, আল্লাহ তাআলা সমস্ত আকাশ মন্ডলীকে এক আঙ্গুলে, সমস্ত যমীনকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজিকে এক আঙ্গুলে, পানি এক আঙ্গুলে ভূতলের সমস্ত জিনিসকে এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে এক আঙ্গুলে রেখে বলবেন, আমিই সম্রাট।’
এ কথা শুনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম ইহুদী পন্ডিতের কথার সমর্থনে এমন ভাবে হেসে দিলেন যে তাঁহার দন্ত মোবারক দেখা যাচ্ছিল। অতপর তিনি
এ আয়াতটুকু পড়লেন।
সহীহ মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত আছে, পাহাড়- পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক হাতে থাকবে তারপর এগুলোকে ঝাকুনি দিয়ে তিনি বলবেন, ‘আমি রাজাধিরাজ, আমিই আল্লাহ।’
সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সমস্ত আকাশ মন্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন। পানি এবং ভূতলে যা কিছু আছে তা এক আঙ্গুলে রাখবেন। আরেক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত সৃষ্টি। [বুখারী ও মুসলিম]
ইবনে ওমর রাদি. হইতে বর্ণিত মারফু হাদীসে আছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সমস্ত আকাশমন্ডলীকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সাত তবক যমীনকে ভাঁজ করবেন এবং এগুলোকে বাম হাতে নিবেন। তারপর বলবেন, “আমি হচ্ছি রাজাধিরাজ। অত্যাচারীরা কোথায়? অংহকারীরা কোথায়? [মুসলিম]
৩। ইবনে আব্বাস রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, সাত তবক আসমান ও যমীন আল্লাহ তাআলার হাতের তালুতে ঠিক যেন তোমাদের কারো হাতে এটা সরিষার দানার মত।
৪। ইবনে যায়েদ বলেন, “আমার পিতা আমাকে বলিয়াছেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“কুরসীর মধ্যে সপ্তাকাশের অবস্থান ঠিক যেন, একটি ঢালের মধ্যে নিক্ষিপ্ত সাতটি দিরহামের {মুদ্রার} মত।” তিনি বলেন, ‘আবুযর রাদি. বলিয়াছেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল¬ামকে এ কথা বলতে শুনেছি,
“আরশের মধ্যে কুরসীর অবস্থান হচ্ছে ঠিক ভূপৃষ্ঠের কোন উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকা একটি আংটির মত।
৫। ইবনে মাসউদ রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার আকাশ এবং এর পরবর্তী আকামের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। আর এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। এমনিভাবে সপ্তমাকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। একই ভাবে কুরসী এবং পানির মাঝখানে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। আরশ হচ্ছে পানির উপরে। আর আল্লাহ তাআলা সমাসীন রয়েছেন আরশের উপর। তোমাদের আমলের কোন কিছুই তাঁহার কাছে গোপন নেই। [ইবনে মাহদী হাম্মাদ বিন সালামা হতে তিনি আসেম হতে, তিনি যিরর হ’তে, এবং যিরর আবদুল¬াহ হতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
[অনুরূপ হাদীস মাসউদী আসেম হতে তিনি আবি ওয়ায়েল হতে, এবং তিনি আবদুল¬াহ হতে বর্ণনা করিয়াছেন।]
৬। আব্বাস বিন আবদুল মোত্তালিব রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“তোমরা কি জানো, আসমান ও যমীনের মধ্যে দূরত্ব কত?” আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁহার রসুলই সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, “আসমান ও যমীনের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। প্রতিটি আকাশের ঘনত্বও [পুরু ও মোটা] পাঁচশ’ বছরের পথ। সপ্তমাকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার উপরিভাগ ও তলদেশের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। আল্লাহ তাআলা এর উপরে সমাসীন রয়েছেন। আদম সন্তানের কোন কর্মকাণ্ডই তাঁহার অজানা নয়।” [আবু দাউদ]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। والارض جميعا قبضته এর তাফসির
২। এ অধ্যায়ে আলোচিত জ্ঞান ও এতদসংশি¬ষ্ট জ্ঞানের চর্চা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এর যুগের ইহুদীদের মধ্যেও বিদ্যমান ছিলো। তারা এ জ্ঞানকে অস্বীকার ও করতোনা।
৩। ইহুদী পন্ডিত ব্যক্তি যখন কেয়ামতের দিনে আল্লাহর ক্ষমতা সংক্রান্ত কথা বললো, তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম তার কথাকে সত্যায়িত করলেন এবং এর সমর্থনে কোরআনের আয়াতও নাযিল হলো।
৪। ইহুদী পন্ডিত কর্তৃক আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কিত মহাজ্ঞানের কথা উল্লেখ করা হলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এর হাসির উদ্রেক হওয়ার রহস্য।
৫। আল্লাহ তাআলার দু’হস্ত মোবারকের সুস্পষ্ট উল্লেখ্য। আকাশ মন্ডলী তাঁহার ডান হাতে, আর সমগ্র যমীন তাঁহার অপর হাতে নিবদ্ধ থাকবে।
৬। অপর হাতকে বাম হাত বলে নাম করণ করার সুস্পষ্ট ঘোষণা।
৭। কেয়ামতের দিন অত্যাচারী এবং অহংকারীদের প্রতি আল্লাহর শাস্তির উল্লেখ।
৮। আকাশের তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লে¬খ।
৯। “তোমাদের কারো হাতে একটা সরিষা দানার মত” রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এর এ কথার তাৎপর্য।
১০। কুরসীর তুলনায় আরশের বিশালতার উল্লেখ।
১১। কুরসী এবং পানি থেকে আরশ সম্পূর্ণ আলাদা।
১২। প্রতিটি আকাশের মধ্যে দূরত্ব ও ব্যবধানের উল্লে¬খ।
১৩। সপ্তমাকাশ ও কুরসীর মধ্যে ব্যবধান।
১৪। কুরসী এবং পানির মধ্যে দূরত্ব।
১৫। আরশের অবস্থান পানির উপর।
১৬। আল্লাহ তাআলা আরশের উপরে সমাসীন।
১৭। আকাশ ও যমীনের দূরত্বের উল্লে¬খ।
১৮। প্রতিটি আকাশের ঘনত্ব [পুরো] পাঁচশ বছরের পথ।
১৯। আকাশ মন্ডলীর উপরে যে সমুদ্র রয়েছে তার উর্ধ্ব দেশ ও তলদেশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ।
والحمد لله رب العلمين وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
৫। উপরোল্লিখিত তিনটি বিষয় ঈমানের দুর্বলতার আলামত।
৬। এখলাসের সাথে একমাত্র আল্লাহকে ভয় করা ফরজের অন্তর্ভুক্ত।
৭। অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় পরিত্যাগকারীর জন্য শাস্তির উল্লেখ।
৮। আল্লাহকে যে ভয় করে তার জন্য সওয়াবের উল্লেখ।