ইজারা ভুমি ও শ্রমিক নিয়োগ করা এবং পারিশ্রমিক দেয়া

ইজারা ভুমি ও শ্রমিক নিয়োগ করা এবং পারিশ্রমিক দেয়া

ইজারা ভুমি ও শ্রমিক নিয়োগ করা এবং পারিশ্রমিক দেয়া >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩৭, ইজারা, অধ্যায়ঃ (১-২২)=২২টি

৩৭/১. অধ্যায়ঃ সৎ ব্যক্তিকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ প্রদান।
৩৭/২. অধ্যায়ঃ কয়েক কিরাআতের বদলে ছাগল-ভেড়া চরানো।
৩৭/৩. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনবোধে অথবা কোন মুসলমান পাওয়া না গেলে মুশরিকদের শ্রমিক নিয়োগ করা।
৩৭/৪. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি এ শর্তে কোন শ্রমিক নিয়োগ করে যে, সে তিন দিন অথবা এক মাস অথবা এক বছর পর কাজ করে দেবে, তবে তা বৈধ। তখন নির্ধারিত সময় আসলে উভয়ই তাদের নির্দিষ্ট শর্তাবলীর উপর বহাল থাকবে।
৩৭/৫. অধ্যায়ঃ জিহাদের ময়দানে মজদুর নিয়োগ।
৩৭/.৬ অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে সময়সীমা উল্লেখ করিল, কিন্তু কাজের উল্লেখ করিল না (তবে তা বৈধ)।
৩৭/৭. অধ্যায় : পতিত প্রায় কোন দেয়াল খাড়া করে দেওয়ার জন্য মজদুর নিয়োগ করা জায়িয।
৩৭/৮. অধ্যায়ঃ অর্ধেক দিনের জন্য মজদুর নিয়োগ করা।
৩৭/৯. অধ্যায়ঃ আসরের নামাজ পর্যন্ত শ্রমিক নিয়োগ করা।
৩৭/১০. অধ্যায়ঃ মজদুরকে পারিশ্রমিক না দেয়ার পাপ।
৩৭/১১. অধ্যায়ঃ আসর সময় হইতে রাত পর্যন্ত শ্রমিক নিয়োগ করা।
৩৭/১২. অধ্যায়ঃ কোন লোককে শ্রমিক নিয়োগ করার পর সে পারিশ্রমিক না নিলে নিয়োগকর্তা সে ব্যক্তির পারিশ্রমিকের টাকা কাজে খাটালো, ফলে তা বৃদ্ধি পেল এবং যে ব্যক্তি অপরের সম্পদ কাজে লাগালো এতে তা বৃদ্ধি পেল।
৩৭/১৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজেকে পিঠে বোঝা বহনের কাজে নিয়োগ করে প্রাপ্ত পারিশ্রমিক হইতে দান খয়রাত করে এবং বোঝা বহনকারীর মজুরী প্রসঙ্গে।
৩৭/১৪. অধ্যায়ঃ দালালীর প্রাপ্য প্রসঙ্গে
৩৭/১৫. অধ্যায়ঃ অমুসলিম দেশে কোন (মুসলিম) ব্যক্তি নিজেকে দারুল হারবের কোন মুশরিকের শ্রমিক খাটতে পারবে কি?
৩৭/১৬. অধ্যায়ঃ কোন আরব গোত্রে সুরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়-ফুঁক করার বদলে কিছু দেওয়া হলে।
৩৭/১৭. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীর কাছ থেকে মাসুল নির্ধারণ এবং বাঁদীর মাসুলের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা।
৩৭/১৮. অধ্যায়ঃ রক্ত মোক্ষণকারীর উপার্জন।
৩৭/১৯. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির কোন কৃতদাসীর মালিকের সাথে এ মর্মে আবেদন করা- সে যেন তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়।
৩৭/২০. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীর এবং পতিতার উপার্জন।
৩৭/২১. অধ্যায়ঃ পশুকে পাল দেয়ার মাশুল।
৩৭/২২. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি ভূমি ইজারা নেয় এবং তাদের দুজনের কেউ মৃত্যুবরণ করে।

৩৭/১. অধ্যায়ঃ সৎ ব্যক্তিকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ প্রদান।

আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “কারণ তোমার মজদুর হিসাবে উত্তম হলো সে ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত”- (ক্বাসাসঃ ২৬)। বিশ্বস্ত খাজনা আদায়কারী নিয়োগ করা এবং কোন পদপ্রার্থীকে উক্ত পদে নিয়োগ না করা।

২২৬০. আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, বিশ্বস্ত খাজাঞ্চি, যাকে কোন কিছু নির্দেশ করলে সন্তুষ্টচিত্তে তা আদায় করে, সে হলো দাতাদের একজন।

২২৬১. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলাম, আমার সঙ্গে আশআরী গোত্রের দুজন লোক ছিল। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি জানতাম না যে, এরা কোন কর্মপ্রার্থী হইবে। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কর্মপ্রার্থী হয়, আমরা আমাদের কাজে তাকে কখনো নিয়োগ করি না অথবা বলেছেন কখনো করব না।

৩৭/২. অধ্যায়ঃ কয়েক কিরাআতের বদলে ছাগল-ভেড়া চরানো।

২২৬২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন কোন নাবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী না চরিয়েছেন। তখন তাহাঁর সাহাবীগণ বলেন, আপনিও? তিনি বলেন, হ্যাঁ; আমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম।

৩৭/৩. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনবোধে অথবা কোন মুসলমান পাওয়া না গেলে মুশরিকদের শ্রমিক নিয়োগ করা।

নাবী (সাঃআঃ) খায়বারের ইয়াহূদীদেরকে চাষাবাদের কাজে নিয়োগ করেন।

২২৬৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(হিজরতের সময়) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- ও আবু বকর (রাদি.) বনূ দীল ও বনু আবদ ইবনু আদী গোত্রের একজন অত্যন্ত সচেতন ও অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক শ্রমিক নিয়োগ করেন। এ লোকটি আস ইবনু আদী ওয়াইল গোত্রের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল আর সে কুরাইশী কাফিরদের ধর্মাবলম্বী ছিল। তাঁরা দুজন [নাবী (সাঃআঃ) ও আবু বক্‌র (রাদি.)] তার উপর আস্থা রেখে নিজ নিজ সাওয়ারী তাকে দিয়ে দিলেন এবং তিন রাত পর এগুলো সাওর পাহাড়ের গুহায় নিয়ে আসতে বলেন। সে তিন রাত পর সকালে তাদের সাওয়ারী নিয়ে তাঁদের কাছে উপস্থিত হল। তারপর তাঁরা দুজন রওয়ানা করিলেন। তাঁদের সঙ্গে আমির ইবনু ফুহাইয়া ও দীল গোত্রের পথপ্রদর্শক সে ব্যক্তিটিও ছিল। সে তাঁদেরকে (সাগরের) উপকূলের পথ ধরে নিয়ে গেল।

৩৭/৪. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি এ শর্তে কোন শ্রমিক নিয়োগ করে যে, সে তিন দিন অথবা এক মাস অথবা এক বছর পর কাজ করে দেবে, তবে তা বৈধ। তখন নির্ধারিত সময় আসলে উভয়ই তাদের নির্দিষ্ট শর্তাবলীর উপর বহাল থাকবে।

২২৬৪. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(হিজরতের ঘটনায়) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এবং আবু বকর (রাদি.) বনূ দীল গোত্রের এক অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে রাস্তা দেখিয়ে দেয়ার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেন। এ লোকটি কুরাইশী কাফিরদের ধর্মাবলম্বী ছিল। তাঁরা দুজন [নাবী (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.)] তাদের আপন আপন সাওয়ারী তার নিকট ন্যস্ত করিলেন এবং এ মর্মে প্রতিশ্রুতি নিলেন যে, তিন রাত পর তৃতীয় দিন সকালে তাদের সাওয়ারী সওর পর্বতের গুহায় নিয়ে আসবে।

৩৭/৫. অধ্যায়ঃ জিহাদের ময়দানে মজদুর নিয়োগ।

২২৬৫. ইয়ালা ইবনু উমাইয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে জাইশ্‌ল উসরাত অর্থাৎ তাবূকের যুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। আমার ধারনায় এটাই ছিল আমার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আমল। আমার একজন মজদুর ছিল। সে একজন লোকের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাদের একজন আরেক জনের আঙ্গুল দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে। (বের করার জন্য) সে আঙ্গুল টান দেয়। এতে তার (প্রতিপক্ষের) একটি সামনের দাঁত পরে যায়। তখন লোকটি (অভিযোগ নিয়ে) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গেল। কিন্তু তিনি (নাবী (সাঃআঃ) তার দাঁতের ক্ষতি পূরনের দাবী বাতিল করে দিলেন এবং বলিলেন সে কি তোমার মুখে তার আঙ্গুল ছেড়ে রাখবে, আর তুমি তা (দাঁত দিয়ে) চিবুতে থাকবে? বর্ণনাকারী [ইয়ালা (রাদি.)] বলেন, আমার মনে পড়ে তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলেছেন, যেমন উট চিবায়।

২২৬৬. Read previous Hadith.ইয়ালা ইবনু উমাইয়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আবু মুলায়কা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার দাদার সূত্রে অনুরূপ একটি ঘটনা বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেছেন, এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির হাত দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল। এতে (লোকটি তার হাত বের করার জন্য সজোরে টান দিলে) (যে কামড় দিয়েছিল) তার সামনের দাঁত পড়ে যায়। আবু বকর (রাদি.)-এর কোন ক্ষতিপূরণের দাবী বাতিল করে দেন।

৩৭/.৬ অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে সময়সীমা উল্লেখ করিল, কিন্তু কাজের উল্লেখ করিল না (তবে তা বৈধ)।

কেননা, আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করিয়াছেন, [শুআইব (আঃ) মূসা (আঃ)-কে বলেন] “আমি আমার এ দুটি মেয়ের মধ্যে একটিকে তোমার কাছে বিয়ে দিতে চাই” ……… “আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার সাক্ষী” পর্যন্ত। (ক্বাসাসঃ ২৭-২৮)

——– কথাটির অর্থ সে অমুককে মজুরী প্রদান করছে। অনুরূপভাবে সমবেদনা প্রকাশার্থে বলা হয়ে থাকে ————– আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান দিন।

৩৭/৭. অধ্যায় : পতিত প্রায় কোন দেয়াল খাড়া করে দেওয়ার জন্য মজদুর নিয়োগ করা জায়িয।

২২৬৭. উবাই ইবনু কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তারা উভয়ে [খাযির ও মূসা (আঃ)] চলতে লাগলেন। সেখানে তারা পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখিতে পেলেন। সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালেন এভাবে এবং (খাযির) উভয় হাত তুললেন এতে দেয়াল ঠিক হয়ে গেল। হাদীসের অপর বর্ণনাকারী ইয়ালা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার ধারনা যে সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, তিনি (খাযির) দেয়ালটির উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, ফলে তা সোজা হয়ে গেল। মূসা (আঃ) (খাযিরকে) বলেন, আপনি ইচ্ছা করলে এ কাজের জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।

সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন যে, এমন পারিশ্রমিক নিতে পারতেন যা দিয়ে আপনার আহার চলত।

৩৭/৮. অধ্যায়ঃ অর্ধেক দিনের জন্য মজদুর নিয়োগ করা।

২২৬৮. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা এবং উভয় আহলে কিতাব (ইয়াহূদী ও খৃষ্টান)-এর উদাহরণ হল এমন এক ব্যক্তির মতো, যে কয়েকজন মজদুরকে কাজে নিয়োগ করে বলিল, সকাল হইতে দুপুর পর্যন্ত এক কিরআত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমার কাজ কে করিবে? তখন ইয়াহূদী কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলিল, কে আছ যে দুপুর হইতে আসর পর্যন্ত এক কিরআতের বিনিময়ে আমার কাজ করে দেবে? তখন খৃষ্টান কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলিল, কে আছ যে আসর হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুই কিরআত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করিবে? আর তোমরাই হলে (মুসলমান) তারা (যারা অল্প পরিশ্রমে অধিক পারিশ্রমিক লাভ করলে) তাতে ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা রাগান্বিত হল, তারা বলিল, এটা কেমন কথা, আমরা কাজ করলাম বেশী, অথচ পারিশ্রমিক পেলাম কম। তখন সে ব্যক্তি (নিয়োগকর্তা) বলিল, আমি তোমাদের প্রাপ্য কম দিয়েছি? তারা বলিল, না। তখন সে বলিল, সেটা তো আমার অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা দান করি।

৩৭/৯. অধ্যায়ঃ আসরের নামাজ পর্যন্ত শ্রমিক নিয়োগ করা।

২২৬৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের এবং ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের উদাহরণ এরূপ, যেমন এক ব্যক্তি কয়েকজন মজদুর নিয়োগ করিল এবং বলিল, দুপুর পর্যন্ত এক এক কীরাতের বিনিময়ে কে আমার কাজ করে দিবে? তখন ইয়াহূদীরা এক এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করিল। তারপর খৃষ্টানরা এক এক কীরাতের বিনিময়ে (আসর পর্যন্ত) কাজ করিল। তারপর তোমরাই যারা আসরের সালাতের সময় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুই দুই কিরাতের বিনিময়ে কাজ করলে। এতে ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা রাগান্বিত হল। তারা বলিল, আমরা কাজ করলাম বেশী অথচ পারিশ্রমিক পেলাম কম। সে (নিয়োগকর্তা) বলিল, আমি কি তোমাদের প্রাপ্য কিছু কম দিয়েছি? তারা বলিল, না। তখন সে বলিল, সেটা তো আমার অনুগ্রহ, তা আমি যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে থাকি।

৩৭/১০. অধ্যায়ঃ মজদুরকে পারিশ্রমিক না দেয়ার পাপ।

২২৭০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরোধী থাকব। তাদের এক ব্যক্তি হল, যে আমার নামে প্রতিজ্ঞা করিল, তারপর তা ভঙ্গ করিল। আরেক ব্যক্তি হল, যে আযাদ মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে। অপর এক ব্যক্তি হল, যে কোন লোককে মজদুর নিয়োগ করিল এবং তার হইতে কাজ পুরোপুরি আদায় করিল, অথচ তার পারিশ্রমিক দিল না।

৩৭/১১. অধ্যায়ঃ আসর সময় হইতে রাত পর্যন্ত শ্রমিক নিয়োগ করা।

২২৭১. আবু মুসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মুসলিম, ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের উদাহরণ এরূপ, যেমন কোন এক ব্যক্তি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করার জন্য কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করিল। তারা দুপুর পর্যন্ত কাজ করে বলিল, তুমি আমাদের যে পারিশ্রমিক দিতে চেয়েছিলে তাতে আমাদের প্রয়োজন নেই, আর আমরা যে কাজ করেছি, তা বাতিল। সে ব্যক্তি (নিয়োগকর্তা) বলিল, তোমরা এরূপ করিবে না, বাকি কাজ পূর্ণ করে পুরো পারিশ্রমিক নিয়ে নাও। কিন্তু তারা তা করিতে অস্বীকার করিল এবং কাজ করা বন্ধ করে দিল। এরপর সে অন্য দুজন মজুর কাজে নিযুক্ত করিল এবং তাদেরকে বলিল, তোমরা এই দিনের বাকী অংশ পূর্ণ করে দাও। আমি তোমাদেরকে সে পরিমাণ মজুরিই দিব, যা পূর্ববর্তীদের জন্য নির্ধারিত করেছিলাম। তখন তারা কাজ শুরু করিল, কিন্তু যখন আসরের সালাতের সময় হল তখন তারা বলিতে লাগলো, আমরা যা করেছি তা বাতিল, আর আপনি এর জন্যে যে মজুরী নির্ধারণ করিয়াছেন তা আপনারই। সে ব্যক্তি বলিল, তোমরা বাকী কাজ করে দাও, দিনের তো সামান্যই বাকী রয়েছে। কিন্তু তারা অস্বীকার করিল। তারপর সে ব্যক্তি অপর কিছু লোককে বাকী দিনের জন্য কাজে নিযুক্ত করিল। তারা বাকী দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করিল এবং পূর্ববর্তী দুদলের পূর্ণ মজুরী নিয়ে নিল। এটা উদাহরণ হল, তাদের এবং এই নূর (ইসলাম) যারা গ্রহন করেছে তাদের।

৩৭/১২. অধ্যায়ঃ কোন লোককে শ্রমিক নিয়োগ করার পর সে পারিশ্রমিক না নিলে নিয়োগকর্তা সে ব্যক্তির পারিশ্রমিকের টাকা কাজে খাটালো, ফলে তা বৃদ্ধি পেল এবং যে ব্যক্তি অপরের সম্পদ কাজে লাগালো এতে তা বৃদ্ধি পেল।

২২৭২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে তিন ব্যক্তি সফরে বের হয়ে তারা রাত কাটাবার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নেয়। হঠাৎ পাহাড় হইতে এক খণ্ড পাথর পড়ে গুহায় মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা নিজেদের মধ্যে বলিতে লাগল তোমাদের সৎকার্যাবলীর ওসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা ছাড়া আর কোন কিছুই এ পাথর হইতে তোমাদেরকে মুক্ত করিতে পারে না। তখন তাদের মধ্যে একজন বলিতে লাগল, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আমি কখনো তাদের আগে আমার পরিবার পরিজনকে কিংবা দাস-দাসীকে দুধ পান করাতাম না। একদিন কোন একটি জিনিসের তালাশে আমাকে অনেক দূরে চলে যেতে হয়; কাজেই আমি তাঁদের ঘুমিয়ে পড়ার পূর্বে ফিরতে পারলাম না। আমি তাঁদের জন্য দুধ দোহায়ে নিয়ে এলাম। কিন্তু তাঁদেরকে ঘুমন্ত পেলাম। তাদের আগে আমার পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীকে দুধ পান করিতে দেয়াটাও আমি পছন্দ করিনি। তাই আমি তাঁদের জেগে উঠার অপেক্ষায় পেয়ালাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এভাবে ভোরের আলো ফুটে উঠল। তারপর তাঁরা জাগলেন এবং দুধ পান করিলেন। হে আল্লাহ! যদি আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে থাকি, তবে এ পাথরের কারনে আমরা যে বিপদে পড়েছি, তা আমাদের হইতে দূর করে দাও। ফলে পাথর সামান্য সরে গেল, কিন্তু তাতে তারা বের হইতে পারল না। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচতো বোন ছিল। সে আমার খুব প্রিয় ছিল। আমি তার সঙ্গে সঙ্গত হইতে চাইলাম। কিন্তু সে বাধা দিল। তারপর এক বছর ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সে আমার কাছে (সাহায্যের জন্য) এল। আমি তাকে একশ বিশ দীনার এ শর্তে দিলাম যে, সে আমার সাথে একান্তে মিলিত হইবে, তাতে সে রাযী হল। আমি যখন সম্পূর্ণ সুযোগ লাভ করলাম, তখন সে বলিল, আমি তোমাকে অবৈধভাবে মোহর ভাঙার অনুমতি দিতে পারি না। ফলে সে আমার সর্বাধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি তার সাথে সঙ্গত হওয়া পাপ মনে করে তার কাছ হইতে ফিরে আসলাম এবং তাকে যে স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলাম, তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তবে আমরা যে বিপদে পড়ে আছি তা দূর কর। তখন সেই পাথরটি (আরও একটু) সরে পড়ল। কিন্তু তাতে তারা বের হইতে পারছিল না। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তারপর তৃতীয় ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন মজদুর নিয়োগ করেছিলাম এবং তাদেরকে তাদের মজুরীও দিয়েছিলাম, কিন্তু একজন লোক তার প্রাপ্য না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরীর টাকা খাটিয়ে তা বাড়াতে লাগলাম। তাতে প্রচুর ধন-সম্পদ অর্জিত হল। কিন্তু কিছুকাল পর সে আমার নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার মজুরী দিয়ে দাও। আমি তাকে বললাম, এসব উট, গরু, ছাগল ও গোলাম যা তুমি দেখিতে পাচ্ছ, তা সবই তোমার মজুরী। সে বলিল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সাথে বিদ্রুপ করো না। তখন আমি বললাম, আমি তোমার সাথে মোটেই বিদ্রুপ করছি না। তখন সে সবই গ্রহণ করিল এবং নিয়ে চলে গেল। তা হইতে একটাও ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজ করে থাকি, তবে আমরা যে বিপদে পড়েছি, তা দূর কর। তখন সে পাথরটি সম্পূর্ণ সরে পড়ল। তারপর তারা বেরিয়ে এসে পথ চলতে লাগল।

৩৭/১৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজেকে পিঠে বোঝা বহনের কাজে নিয়োগ করে প্রাপ্ত পারিশ্রমিক হইতে দান খয়রাত করে এবং বোঝা বহনকারীর মজুরী প্রসঙ্গে।

২২৭৩. আবু মাসউদ আনসারি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরকে সদকা করার নির্দেশ দিলে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বাজারে চলে যেত এবং বোঝা বহন করে এক মুদ (খাদ্য) মজুরী হিসেবে পেত (এবং তা হইতে দান করত) আর তাদের কারো কারো এখন লক্ষ মুদ্রা রয়েছে। (বর্ণনাকারী শাকীক) বলেন, আমার ধারনা, এর দ্বারা তিনি (আবু মাসউদ) নিজেকে ইঙ্গিত করিয়াছেন।

৩৭/১৪. অধ্যায়ঃ দালালীর প্রাপ্য প্রসঙ্গে

ইবনু সীরিন, আতা, ইবরাহীম ও হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) দালালীর মজুরীতে কোন দোষ মনে করেননি। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, যদি কেউ বলে যে, তুমি এ কাপড়টি বিক্রি করে দাও। এতো এতো এর উপর যা বেশী হয় তা তোমার, এতে কোন দোষ নেই। ইবনু সীরিন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি কেউ বলে যে, এটা এত এত দামে বিক্রি করে দাও, লাভ যা হইবে, তা তোমার, অথবা তা তোমার ও আমার মধ্যে সমান হারে ভাগ হইবে, তবে এতে কোন দোষ নেই। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মুসলিমগণ তাদের পরস্পরের শর্তানুযায়ী কাজ করিবে।

২২৭৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে সাক্ষাত করা হইতে নিষেধ করিয়াছেন এবং শহরবাসী, গ্রামবাসীর পক্ষে বেচা-কেনা করিবে না। রাবী [তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে ইবনু আব্বাস! শহরবাসী গ্রামবাসী বেচা-কেনা করিবে না- এ কথার অর্থ কী? তিনি বলিলেন, শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষে দালাল হইবে না।

৩৭/১৫. অধ্যায়ঃ অমুসলিম দেশে কোন (মুসলিম) ব্যক্তি নিজেকে দারুল হারবের কোন মুশরিকের শ্রমিক খাটতে পারবে কি?

২২৭৫. খাব্বাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি একজন কর্মকার ছিলাম। আমি আস ইবনু ওয়ায়িলের তরবারি বানিয়ে দিলাম। তার নিকট আমার পাওনা কিছু মজুরী জমে যায়। আমি পাওনা টাকার তাগাদা দিতে তার কাছে গেলাম। সে বলিল, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে টাকা দিব না, যে পর্যন্ত না তুমি মুহাম্মাদকে অস্বীকার করিবে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তা করব না, যে পর্যন্ত না তুমি মৃত্যুবরণ করিবে, তারপর পুনরত্থিত হইবে। সে বলিল, আমি কি মৃত্যুর পর পুনরত্থিত হব? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলিল, তাহলে তো সেখানে আমার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিও হইবে। তখন আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করে দিব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেনঃ “আপনি কি সে ব্যক্তিকে দেখেছেন, যে আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে এবং বলে আমাকে (পরকালে) অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেওয়া হইবে”-

(মারইয়াম : ৭৭)।

৩৭/১৬. অধ্যায়ঃ কোন আরব গোত্রে সুরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়-ফুঁক করার বদলে কিছু দেওয়া হলে।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, পারিশ্রমিক গ্রহনের ব্যাপারে অধিক হকদার হল আল্লাহর কিতাব। শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, শিক্ষক কোনরূপ (পারিশ্রমিক) শর্তারোপ করিবে না। তবে (বিনাশর্তে) যদি তাকে কিছু দেওয়া হয় তিনি তা গ্রহণ করিতে পারেন। হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি এমন কারো কথা শুনিনি, যিনি (শিক্ষকের পারিশ্রমিক গ্রহণ করাটাকে অপছন্দ মনে করিয়াছেন। হাসান (বাসরী ) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শিক্ষকের পারিশ্রমিক বাবত) দশ দিরহাম দিয়েছেন। ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বণ্টনকারীর পারিশ্রমিক গ্রহণ করাতে কোন দোষ মনে করেননি। তিনি বলেন, বিচারে ঘুষ গ্রহণকে সুহত বলা হয়। লোকেরা অনুমান করার জন্য অনুমানকারীদের পারিশ্রমিক প্রদান করত।

২২৭৬. আবু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর একদল সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন। তারা এক আরব গোত্রে পৌঁছে তাদের মেহমান হইতে চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করিতে অস্বীকার করিল। সে গোত্রের সরদার বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হল। লোকেরা তার (আরগ্যের) জন্য সব ধরনের চেষ্টা করিল। কিন্তু কিছুতেই কোন উপকার হল না, তখন তাদের কেউ বলিল, এ কাফেলা যারা এখানে অবতরণ করেছে তাদের কাছে তোমরা গেলে ভালো হত। সম্ভবত, তাদের কারো কাছে কিছু থাকতে পারে। ওরা তাদের নিকট গেল এবং বলিল, হে যাত্রীদল! আমাদের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে, আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না। তোমাদের কারো কাছে কিছু আছে কি? তাদের (সাহাবীদের) একজন বলিলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম আমি ঝাড়-ফুঁক করিতে পারি। আমরা তোমাদের মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের জন্য মেহমানদারী করনি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়-ফুঁক করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা, আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ কর। তখন তারা এক পাল বকরীর শর্তে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হল। তারপর তিনি গিয়ে “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন” (সুরা ফাতিহা) পড়ে তার উপর ফুঁ দিতে লাগলেন। ফলে সে (এমনভাবে নিরাময় হল) যেন বন্ধন হইতে মুক্ত হল এবং সে এমনভাবে চলতে ফিরে লাগল যেন তার কোন কষ্টই ছিল না। (বর্ণনাকারী বলেন,) তারপর তারা তাদের স্বীকৃত পারিশ্রমিক পুরোপুরি দিয়ে দিল। সাহাবীদের কেউ কেউ বলেন, এগুলো বণ্টন কর। কিন্তু যিনি ঝাড়-ফুঁক করেছিলেন তিনি বলিলেন এটা করব না, যে পর্যন্ত না আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে এই ঘটনা জানাই এবং লক্ষ্য করি তিনি আমাদের কী নির্দেশ দেন। তারা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা করিলেন। তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলেন, তুমি কিভাবে জানলে যে, সুরা ফাতিহা একটি দুআ? তারপর বলেন, তোমরা ঠিকই করেছ। বণ্টন কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা অংশ রাখ। এ বলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) হাসলেন। শোবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার নিকট আবু বিশর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমি মুতাওয়াক্কিল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এ হাদিস শুনিয়াছি।

৩৭/১৭. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীর কাছ থেকে মাসুল নির্ধারণ এবং বাঁদীর মাসুলের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা।

২২৭৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু তায়বা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-কে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। তিনি তাকে এক সা কিংবা দু সা খাদ্য দিতে আদেশ করিলেন এবং তার মালিকের সাথে আলোচনা করে তার উপর ধার্যকৃত মাসুল কমিয়ে দিলেন।

৩৭/১৮. অধ্যায়ঃ রক্ত মোক্ষণকারীর উপার্জন।

২২৭৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) শিঙ্গা নিয়েছিলেন এবং শিঙ্গা প্রয়োগকারীকে তার মজুরী দিয়েছিলেন।

২২৭৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) শিঙ্গা নিয়েছিলেন এবং শিঙ্গা প্রয়োগকারীকে তার পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। যদি তিনি তা অপছন্দ করিতেন তবে তাকে (পারিশ্রমিক) দিতেন না।

২২৮০. আমর ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাঃআঃ) শিঙ্গা লাগাতেন এবং কোন লোকের পারিশ্রমিক কম দিতেন না।

৩৭/১৯. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির কোন কৃতদাসীর মালিকের সাথে এ মর্মে আবেদন করা- সে যেন তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়।

২২৮১. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন নাবী (সাঃআঃ) শিঙ্গা প্রয়োগকারী এক গোলামকে ডাকলেন। সে তাঁকে শিঙ্গা লাগাল। তিনি তাকে এক সা বা দু সা অথবা এক মুদ বা দু মুদ (পারিশ্রমিক) দিতে নির্দেশ দিলেন। এরপর তার ব্যাপারে (তার মালিকের সাথে) কথা বলিলেন, ফলে তার উপর ধার্যকৃত মাসুল কমিয়ে দেয়া হল।

৩৭/২০. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীর এবং পতিতার উপার্জন।

ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিলাপকারিণী ও গায়িকার পারিশ্রমিক গ্রহণ মাকরূহ মনে করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন : “তোমাদের বাঁদী সতীত্ব রক্ষা করিতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হইতে বাধ্য করো না- আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।” (আন-নূর : ৩৩) মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, —– অর্থ তোমাদের দাসীরা।

২২৮২. আবু মাসউদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কুকুরের মূল্য, পতিতার উপার্জন ও গণকের পারিতোষিক নিষিদ্ধ করিয়াছেন।

২২৮৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) দাসীদের অবৈধ উপার্জন নিষিদ্ধ করিয়াছেন।

৩৭/২১. অধ্যায়ঃ পশুকে পাল দেয়ার মাশুল।

২২৮৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) পশুকে পাল দেয়া বাবদ বিনিময় নিতে নিষেধ করিয়াছেন।

৩৭/২২. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি ভূমি ইজারা নেয় এবং তাদের দুজনের কেউ মৃত্যুবরণ করে।

ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবারের লোকদের তাকে উচ্ছেদ করার ইখতিয়ার নেই এবং হাসান, হাকাম ও ইয়াস ইবনু মুআবিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইজারা নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অর্ধেক ফসলের শর্তে খায়বারের জমি (ইয়াহূদীদেরকে ইজারা) দিয়েছিলেন এবং এ ইজারা নাবী (সাঃআঃ)-এর সময় এবং আবু বক্‌র ও উমর (রাদি.)-এর খিলাফতের প্রথম দিক পর্যন্ত বহাল ছিল। এ কথা কোথাও উল্লেখ নেই যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর ইন্তিকালের পর আবু বক্‌র ও উমর (রাদি.) উক্ত জমি নতুনভাবে ইজারা দিয়েছিলেন।

২২৮৫. আবদুল্লাহ (ইবনু উমর) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খায়বারের জমি (ইয়াহূদীদেরকে) এ শর্তে দিয়েছিলেন যে, তারা তাতে কৃষি কাজ করে ফসল উৎপাদন করিবে এবং উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাদের প্রাপ্য হইবে। ইবনু উমর (রাদি.) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যামানায় কিছু মূল্যের বিনিময়ে যার পরিমাণটা নাফি নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন, কিন্তু আমার তা স্মরণ নেই, জমি ইজারা দেয়া হত।

২২৮৬. রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) রিওয়ায়াত করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) শস্য ক্ষেত বর্গা দিতে নিষেধ করিয়াছেন। উবায়দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি-এর বরাত দিয়ে ইবনু উমর (রাদি.) হইতে (এটুকু অতিরিক্ত) বর্ণনা করিয়াছেন যে, উমর (রাদি.) কর্তৃক ইয়াহূদীদেরকে বিতাড়ন করা পর্যন্ত (খায়বারের জমি তাদের নিকট ইজারা দেয়া হত)।

By ইমাম বুখারী

এখানে কুরআন শরীফ, তাফসীর, প্রায় ৫০,০০০ হাদীস, প্রাচীন ফিকাহ কিতাব ও এর সুচিপত্র প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্ন/পরামর্শ/ ভুল সংশোধন/বই ক্রয় করতে চাইলে আপনার পছন্দের লেখার নিচে মন্তব্য (Comments) করুন। “আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়” -বুখারি ৩৪৬১। তাই এই পোস্ট টি উপরের Facebook বাটনে এ ক্লিক করে শেয়ার করুন অশেষ সাওয়াব হাসিল করুন

Leave a Reply