আল্লাহর বিধান, সুপারিশ ও সুন্দরতম নামসমূহ

৪৬ কাযীউল কুযাত {মহা বিচারক} প্রভৃতি নামকরণ প্রসংগে
৪৭ আল্লাহর সম্মানার্থে {শিরকী} নামের পরিবর্তন
৪৮ আল্লাহর যিকির, কুরআন এবং রসুল সম্পর্কিত কোন বিষয় নিয়ে খেল- তামাশা করা প্রসংগে
৪৯ অধ্যায়
৫০ অধ্যায়
৫১ আল্ল¬াহ তাআলার আসমায়ে হুসনা {বা সুন্দরতম নামসমূহ}
৫২ “আসসালামু আলাল্ল¬াহ” {আল্লাহর } উপর শান্তি বর্ষিত হোক} বলা যাবে না
৫৩ ‘হে আল্লাহ তোমার মর্জি হলে আমাকে মাফ করো’ প্রসঙ্গে
৫৪ অধ্যায়
৫৫ আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য চাইলে বিমুখ না করা
৫৬ “বি ওয়াজহিল্ল¬াহ’ বলে একমাত্র জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই প্রার্থনা করা যায় না।
৫৭ {বাক্যের মধ্যে ‘যদি’ ব্যবহার সংক্রান্ত আলোচনা}
৫৮ বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ
৫৯ অধ্যায
৬০ তাকদীর অস্বীকারকারীদের পরিণতি ছবি অঙ্কনকারী ও কসম সম্পর্কে শরিয়তের বিধান

৪৬তম অধ্যায়ঃ কাযীউল কুযাত {মহা বিচারক} প্রভৃতি নামকরণ প্রসংগে

১। আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিত সহীহ হাদীসে রসুল সাঃআঃ এরশাদ করিয়াছেন,
“আল্ল¬াহ তাআলার কাছে ঐ ব্যক্তির নাম সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার নামকরণ করা হয় ‘রাজাধিরাজ’ বা ‘প্রভূর প্রভূ’। আল্ল¬াহ ব্যতীত কোন প্রভূ নেই”। [বুখারি]
সুফিয়ান সওরী বলিয়াছেন, ‘রাজাধিরাজ’ কথাটি ‘শাহানশাহ’ এর মতই একটি নাম। আরো একটি বর্ণনা মতে রসুল সাল্ল¬াল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করেছন-
“কেয়ামতের দিন আল্ল¬াহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং খারাপ ব্যক্তি হচ্ছে {যার নামকরণ করা হচ্ছে রাজাধিরাজ}’। উল্লেখিত হাদীসে أخنع শব্দের অর্থ হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়.
১। ‘রাজাধিরাজ’ নামকরণের প্রতি নিষেধাজ্ঞা।
২। ‘রাজাধিরাজ’ এর অর্থ সুফিয়ান সওরী কর্তৃক বর্ণিত ‘শাহানশাহ’ এর অর্থের অনুরূপ।
৩। বর্ণিত ব্যাপারে এবং এ জাতীয় বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা। এক্ষেত্রে অন্তরে কি নিয়ত আছে তা বিবেচ্য নয়।
৪। বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা সবই আল্ল¬াহর উদ্দেশ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৪৭ তম অধ্যায়ঃ আল্লাহর সম্মানার্থে {শিরকী} নামের পরিবর্তন

১। আবু শুরাইহ হতে বর্ণিত আছে এক সময় তার কুনিয়াত ছিল আবুল হাকাম {জ্ঞানের পিতা} রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে জ্ঞান সত্তা এবং তিনিই জ্ঞানের আধার” তখন আবু শুরাইহ বললেন, ‘আমার কওমের লোকেরা যখন কোন বিষয়ে মতবিরোধ করে, তখন ফয়সালার জন্য আমার কাছে চলে আসে। তারপর আমি তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেই। এতে উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট হয়ে যায়।’ রাসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম একথা শুনে বললেন, এটা কতইনা ভাল! তোমার কি সন্তানাদি আছে? আমি বললাম, ‘শুরাইহ’ ‘মুসলিম’ এবং ‘আবদুল্লাহ’ নামের তিনটি ছেলে আছে।’ তিনি বললেন, ‘তাদের মধ্যে সবার বড় কে?’ আমি বললাম,‘শুরাইহ’। তিনি বললেন, “অতএব তুমি আবু শুরাইহ” {শুরাইহের পিতা} [আবু দাউদ]।
এ অধ্যায় থেকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। আল্ল¬াহর আসমা ও সিফাত অর্থাৎ নাম ও গুণাবলীর সম্মান করা; যদিও এর অর্থ বান্দার উদ্দেশ্য না হয়।
২। আল্ল¬াহর নাম ও সিফাতের সম্মানার্থে নাম পরিবর্তন করা।
৩। কুনিয়াতের জন্য বড় সন্তানের নাম পছন্দ করা।

৪৮ তম অধ্যায়ঃ আল্লাহর যিকির, কুরআন এবং রসুল সম্পর্কিত কোন বিষয় নিয়ে
খেল- তামাশা করা প্রসংগে

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা খেল- তামাশা করছিলাম।” [ফুসসিলাত . ৫০]
২। ইবনে ওমর, মুহাম্মদ বিন কা’ব, যায়েদ বিন আসলাম এবং কাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, {তাদের একের কথা অপরের কথার মধ্যে সামঞ্জস্য আছে} তাবুক যুদ্ধে একজন লোক বললো, এ ক্বারীদের {কুরআন পাঠকারীর} মত এত অধিক পেটুক, কথায় এত অধিক মিথ্যুক এবং যুদ্ধের ময়দানে শত্র“র সাক্ষাতে এত অধিক ভীরু আর কোন লোক দেখিনি। অর্থাৎ লোকটি তার কথা দ্বারা মুহাম্মদ সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এবং তাঁহার ক্বারী সাহাবায়ে কেরামের দিকে ইঙ্গিত করেছিলো। আওফ বিন মালেক লোকটিকে বললেন, ‘তুমি মিথ্যা কথা বলেছো। কারণ, তুমি মুনাফিক।’
আমি অবশ্যই রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬ামকে এ খবর জানাবো। আওফ তখন এ খবর জানানোর জন্য রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এর কাছে চলে গেলেন। গিয়ে দেখলেন কুরআন তাঁহার চেয়েও অগ্রগামী {অর্থাৎ আওফ পৌছার পূর্বেই অহীর মাধ্যমে রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম ব্যাপারটি জেনে ফেলেছেন} এ ফাঁকে মুনাফিক লোকটি তার উটে চড়ে রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এর কাছে চলে আসলো। তারপর সে বললো, ‘হে আল্ল¬াহর রসুল, চলার পথে আমরা অন্যান্য পথচারীদের মত পরস্পরের হাসি, রং- তামাশা করছিলাম’ যাতে করে আমাদের পথ চলার কষ্ট লাঘব হয়। ইবনে ওমর [রাদি.] বলেন, এর উটের গদির রশির সাথে লেগে আমি যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। পাথর তার পায়ের উপর পড়ছিলো, আর সে বলছিলো, ‘আমরা হাসি ঠাট্টা করছিলাম।’ তখন রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তোমরা কি আল্ল¬াহ, তাঁহার আয়াত {কুরআন} এবং তাঁহার রসুলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করছিলে?
তিনি তার দিকে {মুনাফিকের দিকে} দৃষ্টিও দেননি। এর অতিরিক্ত কোন কথাও বলেননি।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় :
১। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একথা অনুধাবন করা যে, আল্লাহ, কুরআন ও রসুলের সাথে যারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করে তারা কাফের।
২। এ ঘটনা সংশি¬ষ্ট আয়াতের তাফসির ঐ ব্যক্তির জন্য যে, এ ধরনের কাজ করে অর্থাৎ আল্ল¬াহ, কুরআন ও রসুলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে।
৩। চোগলখুরী এবং আল্ল¬াহ ও তাঁহার রসুলের উদ্দেশ্যে নসীহতের মধ্যে পার্থক্য।
৪। এমন ওযরও রয়েছে যা গ্রহণ করা উচিৎ নয়।

৪৯তম অধ্যায়ঃ

১। আল্ল¬াহ তাআলার বাণী .
“দুঃখ- দুর্দশার পর যদি আমি মানুষকে আমার রহমতের আস্বাদ গ্রহণ করাই, তাহলে সে অবশ্যই বলে, এ নেয়ামত আমারই জন্য হয়েছে।” [ফুসসিলাত . ৫০] বিখ্যাত মুফাসসির মুজাহিদ বলেন, ‘ইহা আমরই জন্য’ এর অর্থ হচ্ছে, ‘আমার নেক আমলের বদৌলতেই এ নেয়ামত দান করা হয়েছে, আমিই এর হকদার।’ ইবনে আব্বাস [রাদি.] বলেন, সে এ কথা বলতে চায়, ‘নেয়ামত আমার আমলের কারণেই’ এসেছে অর্থাৎ এর প্রকৃত হকদার আমিই।
আল্ল¬াহ তাআলা আরো বলিয়াছেন,
“সে বলে, ‘নিশ্চয়ই এ নেয়ামত আমার ইলম ও জ্ঞানের জন্য আমাকে দেয়া হয়েছে।” [কাসাস ঃ৭৮]
কাতাদাহ [রাদি.] বলেন, ‘উপার্জনের রকমারী পন্থা সম্পর্কিত জ্ঞান থাকার কারণে আমি এ নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছি।’ অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন ‘আল্লাহ তাআলার ইলম মোতাবেক আমি এর {নেয়ামতের} হকদার। আমার মর্যাদার বদৌলতেই এ নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছি।’
মুজাহিদের এ কথার অর্থই উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে।
২। আবু হুরাইয়রা [রাদি.] হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামকে এ কথা বলতে শুনেছেন,
“বর্ণিত ইসরাইল বংশে তিনজন লোক ছিল . যাদের একজন ছিল কুষ্টরোগী, আরেকজন টাক পড়া, অপরজন ছিল অন্ধ। এমতাবস্থায় আল্ল¬াহ তাআলা তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তখন তাদের কাছে তিনি ফেরেস্তা পাঠালেন। কুষ্টরোগীর কাছে ফেরেস্তা এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি? সে বললো, ‘সুন্দর চেহারা এবং সুন্দর ত্বক {শরীরের চামড়া}। আর যে রোগের কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে তা থেকে মুক্তি আমার কাম্য। তখন ফেরেস্তা তার শরীরে হাত বুলিয়ে দিলো। এতে তার রোগ দূর হয়ে গেলো তাকে সুন্দর রং আর
সুন্দর ত্বক দেয়া হলো। তারপর ফেরেস্তা তাকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার প্রিয় সম্পদ কি? সে বললো, “উট অথবা গরু”। {ইসহাক অর্থাৎ হাদীস বর্ণনাকারী উট কিংবা গরু এ দু’য়ের মধ্যে সন্দেহ করছেন} তখন তাকে দশটি গর্ভবতী উট দেয়া হলো। ফিরিস্তা তার জন্য দোয়া করে বললো, “আল্ল¬াহ এ সম্পদে তোমাকে বরকত দান করুন।”
তারপর ফেরেস্তা টাক পড়া লোকটির কাছে গিয়ে বললো, “তোমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি?” লোকটি বললো, “আমার প্রিয় জিনিস হচ্ছে সুন্দর চুল। আর লোকজন আমাকে যার জন্য ঘৃণা করে তা থেকে মুক্ত হতে চাই।” ফেরেস্তা তখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। এতে তার মাথার টাক দূর হয়ে গেলো। তাকে সুন্দর চুল দেয়া হলো। অতঃপর ফেরেস্তা তাকে জিজ্ঞেস করলো, “কোন সম্পদ তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয়? সে বললো, “উট অথবা গরু।” তখন তাকে গর্ভবতী গাভী দেয়া হলো। ফেরেস্তা তার জন্য দোয়া করে বললো, “আল্ল¬াহ এ সম্পদে তোমাকে বরকত দান করুন। ”
তারপর ফেরেস্তা অন্ধ লোকটির কাছে এসে বললো, “তোমার কাছে সবচেয় প্রিয় বস্তু কি?” লোকটি বললো, “আল্ল¬াহ যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। যার ফলে আমি লোকজনকে দেখতে পাবো, এটাই আমার প্রিয় জিনিস।” ফেরেস্তা তখন তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলো। এতে লোকটির দৃষ্টিশক্তি আল্ল¬াহ তাআলা ফিরেয়ে দিলেন। ফেরেস্তা তাকে বললো, “কি সম্পদ তোমার কাছে প্রিয়? সে বললো, “ছাগল আমার বেশী প্রিয়।” তখন তাকে একটি গর্ভবতী ছাগল দেয়া হলো। তারপর ছাগল বংশ বৃদ্ধি করতে লাগলো। এমনিভাবে উট ও গরু বংশ বৃদ্ধি করতে লাগলো। অবশেষে অবস্থা এই দাঁড়ালো যে, একজনের উট দ্বারা মাঠ ভরে গেলো, আরেকজনের গরু দ্বারা মাঠ পূর্ণ হয়ে গেলো এবং আরেকজনের ছাগল দ্বারা মাঠ ভর্তি হয়ে গেলো।
এমতাবস্থায় একদিন ফেরেস্তা তার স্বীয় বিশেষ আকৃতিতে কুষ্ঠ রোগীর কাছে উপস্থিত হয়ে বললো, “আমি একজন মিসকিন।” আমার সফরের সম্বল শেষ হয়ে গেছে {আমি খুবই বিপদগ্রস্ত} আমার গন্তব্যে পৌছার জন্য প্রথমে আল্ল¬াহর তারপর আপনার সাহায্য দরকার। যে আল্ল¬াহ আপনাকে এত সুন্দর রং এবং সুন্দর ত্বক দান করিয়াছেন, তাঁহার নামে আমি আপনার কাছে একটা উট সাহায্য চাই, যাতে আমি নিজ গন্তব্যস্থানে পৌঁছতে পারি। তখন লোকটি বললো, ‘দেখুন, আমার অনেক দায়-দায়িত্ব আছে, হকদার আছে।’ ফেরেস্তা বললো, ‘আমার মনে হয়, আমি আপনাকে চিনি।’ আপনি কি কুষ্ঠ রোগী ছিলেন না? আপনি খুব গরীব ছিলেন? লোকজন আপনাকে খুব ঘৃণা করতো। তারপর আল্লাহ আপনাকে এ সম্পদ দান করিয়াছেন। তখন লোকটি বললো, ‘এ সম্পদ আমার পূর্ব পুরুষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। ফেরেস্তা তখন বললো, “তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো তাহলে আল্ল¬াহ যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে দেন।”
তারপর ফেরেস্তা মাথায় টাক- পড়া লোকটির কাছে গেল এবং ইতিপূর্বে কুষ্ঠরোগীর সাথে যে ধরনের কথা বলেছিলো, তার {টাক পড়া লোকটির} সাথেও সে ধরনের কথা বললো। প্রতি উত্তরে কুষ্ঠরোগী যে ধরনের জবাব দিযেছিলে, এ লোকটিও সেই একই ধরনের জবাব দিলো। তখন ফেরেস্তাও আগের মতই বললো, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তাহলে আল্ল¬াহ তাআলা যেন তোমাকে তোমার পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে দেন।’ অতঃপর ফেরেস্তা স্বীয় আকৃতিতে অন্ধ লোকটির কাছে গিয়ে বললো, ‘আমি এক গরীব মুসাফির। আমার পথের সম্বল নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। প্রথম আল্ল¬াহর তারপর আপনার সাহায্য কামনা করছি। যিনি আপনার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়াছেন, তাঁহার নামে একটি ‘ছাগল’ আপনার কাছে সাহায্য চাই, যাতে আমার সফরে নিজ গন্তব্যস্থানে পৌছতে পারি।’ তখন লোকটি বললো, ‘আমি অন্ধ ছিলাম। আল্ল¬াহ তাআলা আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়াছেন। আপনার যা খুশি নিয়ে যান, আর যা খুশি রেখে যান। আল্ল¬াহর কসম, আল্ল¬াহর নামে আপনি আজ যা নিয়ে যাবেন, তার বিন্দুমাত্র আমি বাধা দেব না।’ তখন ফেরেস্তা বললো, ‘আপনার মাল আপনি রাখুন। আপনাদেরকে শুধুমাত্র পরীক্ষা করা হলো। আপনার আচরণে আল্ল¬াহ সন্তুষ্ট হয়েছেন, আপনার সঙ্গীদ্বয়ের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়েছেন।” [বুখারি ও মুসলিম]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। সুরা ফুসসিলাতের ৫০ নং আয়াতের তাফসির।
২। ليقولن هذا لى এর অর্থ।
৩। أوتيته على علم عندى এর অর্থ।
৪। আশ্চর্য ধরনের কিসসা এবং তাতে নিহিত উপদেশাবলী।

৫০তম অধ্যায়ঃ

১। আল্ল¬াহ তাআলার বাণী .
“অতঃপর আল্লাহ যখন উভয়কে একটি সুস্থ ও নিখূঁত সন্তান দান করলেন, তখন তারা তাঁহার দানের ব্যাপারে অন্যকে তাঁহার শরিক গণ্য করতে শুরু করলো।” [আ’রাফ . ১৯০]
ইবনে হযম [রহ:] বলেন, ঊলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, এমন প্রত্যেক নামই হারাম, যা দ্বারা গাইরুল্লাহর ইবাদত করার অর্থ বুঝায়। যেমন, আবদু ওমর, আবদুল কা’বা এবং এ জাতীয় অন্যান্য নাম। তবে আবদুল মোত্তালিব এর ব্যতিক্রম। ইবনে আব্বাস [রাদি.] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আদম আ. যখন বিবি হাওয়ার সাথে মিলিত হলেন, তখন হাওয়া গর্ভবতী হলেন। এমতাবস্থায় শয়তান আদম ও হাওয়ার কাছে এসে বললো, ‘আমি তোমাদের সেই বন্ধু ও সাথী, যে নাকী তোমাদের জান্নাত থেকে বের
করেছে। তোমরা অবশ্যই আমার আনুগত্য করো, নতুবা গর্ভস্থ সন্তানের মাথায় উটের শিং গজিয়ে দিবো, তখন সন্তান তোমার পেট কেটে বের করতে হবে। আমি অবশ্যই একাজ করে ছাড়বো।”
শয়তান এভাবে তাদেরকে ভয় দেখাচ্ছিল। শয়তান বললো, তোমরা তোমাদের সন্তানের নাম ‘আব্দুল হারিছ’ রেখো। তখন তাঁহারা শয়তানের আনুগত্য করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর তাদের একটি মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হলো। আবারো বিবি হাওয়া গর্ভবতী হলেন। শয়তানও পুনরায় তাঁদের কাছে এসে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো। এর ফলে তাঁদের অন্তরে সন্তানের প্রতি ভালবাসা তীব্র হয়ে দেখা দিলো। তখন তাঁহারা সন্তানের নাম ‘আবদুল হারিস’ রাখলেন। এভাবেই তাঁহারা আল্ল¬াহ প্রদত্ত নেয়ামতের মধ্যে তাঁহার সাথে শরিক করে ফেললেন। এটাই হচ্ছে جعلا له شركاء فيما أتاهما এ আয়াতের তাৎপর্য [ইবনে আবি হাতিম হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন]
কাতাদাহ থেকে সহীহ সনদে অপর একটি হাদীসে বর্নিত আছে, তিনি বলেন, তাঁহারা আল্ল¬াহর সাথে শরিক করেছিলেন আনুগত্যের ক্ষেত্রে ইবাদতের ক্ষেত্রে নয়।’
মুজাহিদ থেকে সহীহ সনদে لئن أتينا صالحا এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্নিত আছে, তিনি বলেন, সন্তানটি মানুষ না হওয়ার আশংকা তাঁহারা {পিতা-মাতা} করেছিলেন। ’
{হাসান, সাঈদ প্রমুখের কাছ থেকে এর অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে।}
এ অধ্যায় থেকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো জানা যায় ঃ
১। যেসব নামের মধ্যে গাইরুল¬াহর ইবাদতের অর্থ নিহিত রয়েছে সে নাম রাখা হারাম।
২। সুরা আ’রাফের ১৯০ নং আয়াতের তাফসির।
৩। আলোচিত অধ্যায়ে বর্ণিত শিরক হচ্ছে শুধুমাত্র নাম রাখার জন্য। এর দ্বারা হাকীকত {অর্থাৎ শিরক করা} উদ্দেশ্য ছিল না।
৪। আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে একটি নিখূঁত ও পূর্ণাঙ্গ কন্যা সন্তান লাভ করা একজন মানুষের জন্য নেয়ামতের বিষয়।
৫। আল্ল¬াহর আনুগত্যের মধ্যে শিরক এবং ইবাদতের মধ্যে শিরকের ব্যাপারে সালাফে-সালেহীন পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়াছেন।

৫১ তম অধ্যায়ঃ আল্ল¬াহ তাআলার আসমায়ে হুসনা {বা সুন্দরতম নামসমূহ}

১। আল্ল¬াহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“আল্ল¬াহর সুন্দর সুন্দর অনেক নাম রয়েছে। তোমরা এসব নামে তাঁহাকে
ডাকো। আর যারা তাঁহার নামগুলোকে বিকৃত করে তাদেরকে পরিহার করে চলো।” [আ’রাফ . ১৮০]
২। ইবনে আবি হাতিম ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, يلحدون فى أسمائه {তারা তাঁহার নামগুলো বিকৃত করে} এর অর্থ হচ্ছে তারা শিরক কর্ ে
৩। ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে আরো বর্ণিত আছে, মুশরিকরা ‘ইলাহ’ থেকে ‘লাত’ আর ‘আজীজ’ থেকে ‘উযযা’ নামকরণ করছে।
৪। আ’মাস হইতে বর্ণিত আছে, মুশরিকরা আল্ল¬াহর
নামসমূহের মধ্যে এমন কিছু {শিরকী বিষয়} ঢুকিয়েছে যার অস্তিত্ব আদৌ তাতে নেই।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। আল্লাহর নামসমূহ যথাযথ স্বীকৃতি
২। আল্ল¬াহর নামসমূহ সুন্দরতম হওয়া।
৩। সুন্দর ও পবিত্র নামে আল্ল¬াহকে ডাকার নির্দেশ।
৪। যেসব মূর্খ ও বেইমান লোকেরা আল্ল¬াহর পবিত্র নামের বিরুদ্ধাচারণ করে তাদেরকে পরিহার করে চলা।
৫। আল্লাহর নামে বিকৃতি ঘটানোর ব্যাখ্যা।

৫২তম অধ্যায়ঃ “আসসালামু আলাল্ল¬াহ” {আল্লাহর } উপর শান্তি বর্ষিত হোক} বলা যাবে না

১। সহীহ বুখারীতে ইবনে মাসউদ রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, আমরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর সাথে নামাযে মগ্ন ছিলাম। তখন আমরা বললাম,
“আল্লাহর উপর তাঁহার বান্দাদের পক্ষ থেকে শান্তি হোক, অমুক অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম বললেন,
“আল্লাহর উপর শান্তি হোক, এমন কথা তোমরা বলো না। কেননা আল্লাহ নিজেই ‘সালাম’ {শান্তি}”
অ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। ‘সালাম’ এর ব্যাখ্যা।
২। ‘সালাম’ হচ্ছে সম্মানজনক সম্ভাষণ।
৩। এ {‘সালাম’} সম্ভাষণ আল্লাহর ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।
৪। আল্লাহর ব্যাপারে ‘সালাম’ প্রযোজ্য না হওয়ার কারণ।
৫। বান্দাহগণকে এমন সম্ভাষণ শিক্ষা দেয়া হইয়াছেযা আল্লাহর জন্য সমীচীন ও শোভনীয়।

৫৩তম অধ্যায়ঃ ‘হে আল্লাহ তোমার মর্জি হলে আমাকে মাফ করো’ প্রসঙ্গে

১। সহীহ হাদীসে আবু হুরায়রা রাদি. হতে বর্ণিত আছে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন ,
“তোমাদের মধ্যে কেউ যেন একথা না বলে, ‘হে আল্লাহ, তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে মাফ করে দাও, ‘হে আল্লাহ, তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে করুণা করো’। বরং দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। কেননা আল্লাহর উপর জবরদস্তী করার মত কেউ নেই।” [বুখারি]
২। সহী মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে,
“আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার উৎসাহ উদ্দীপনাকে বৃদ্ধি করা উচিৎ। কেননা আল্লাহ বান্দাকে যাই দান করেন না কেন তার কোনটাই তাঁহার কাছে বড় কিংবা কঠিন কিছুই নয়।”

৫৪তম অধ্যায় .

১। আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে রসুল [সাঃআঃ] এরশাদ করিয়াছেন,
“ তোমাদের কেউ যেন না বলে, ‘তোমার প্রভুকে খাইয়ে দাও’ ‘তোমার প্রভুকে অজু করাও’। বরং সে যেন বলে, ‘্আমার নেতা’ ‘আমার মনিব’। তোমাদের কেউ যেন না বলে ‘আমার দাস’ ‘আমার দাসী’। বরং সে যেন বলে, ‘আমার ছেলে, আমার মেয়ে, আমার চাকর।”
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। আমার দাস- দাসী বলা নিষিদ্ধ।
২। কোন গোলাম যেন তার মনিবকে না বলে, ‘আমার প্রভু’। এ
কথাও যেন না বলে, ‘তোমার রবকে আহার করাও’।
৩। প্রথম শিক্ষণীয় বিষয় হলো, ‘আমার ছেলে’ ‘আমার মেয়ে’ ‘আমার চাকর’ বলতে হবে।
৪। দ্বিতীয় শিক্ষণীয় বিষয় হলো, ‘আমার নেতা,’ ‘আমার মনিব’ বলতে হবে।
৫। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি শতর্কতা অবলম্বন। আর তা হচ্ছে, শব্দ ব্যবহার ও প্রয়োগের মধ্যেও তাওহীদের শিক্ষা বাস্তবায়ন করা।

৫৫ তম অধ্যায়ঃ আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য চাইলে বিমুখ না করা

১। ইবনে ওমর রাদি. থেকে বর্নিত আছে, রসুল সাল্লাল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করেছে,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে চায় তাকে দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাকে আশ্রয় দাও। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে ডাকে, তার ডাকে সাড়া দাও। যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভাল কাজ করে, তার যথোপযুক্ত প্রতিদান দাও। তার প্রতিদানের জন্য যদি তোমরা কিছুই না পাও, তাহলে তার জন্য এমন দোয়া করো, যার ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছো। ” [আবু দাউদ, নাসায়ী]
এ অধ্যায় থেকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে আশ্রয় দান।
২। আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য প্রার্থনাকারীকে সাহায্য প্রদান।
৩। {নেক কাজের} আহ্বানে সাড়া দেয়া।
৪। ভাল কাজের প্রতিদান দেয়া।
৫। ভাল কাজের প্রতিদানে অক্ষম হলে উপকার সাধনকারীর জন্য দোয়া করা।
৬। এমন খালেসভাবে উপকার সাধনকারীর জন্য দোয়া করা, যাতে মনে হয়, যথোপযুক্ত প্রতিদান দেয়া হয়েছে। রসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল-াম এর বাণী حتى تروا أنكم قد كافأتموه দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে।

৫৬তম অধ্যায়ঃ “বি ওয়াজহিল্ল¬াহ’ বলে একমাত্র জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই প্রার্থনা
করা যায় না।

১। জাবের রাদি. থেকে বর্নিত আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল-াম এরশাদ করিয়াছেন,
“বিওয়াজহিল¬াহ {আল্লাহর চেহারার ওসীলা} দ্বারা একমাত্র জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই চাওয়া যায় না।” [আবু দাউদ]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ জান্নাত ব্যতীত ‘বিওয়াজহিল¬াহ” দ্বারা অন্য কিছু চাওয়া যায় না।
২। আল্লাহর ‘চেহারা’ নামক সিফাত বা গুনের স্বীকৃতি।

৫৭তম অধ্যায়ঃ {বাক্যের মধ্যে ‘যদি’ ব্যবহার সংক্রান্ত আলোচনা}

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“তারা বলে, ‘যদি’ এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কিছু থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না” [আল ইমরান . ১৫৪]
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করিয়াছেন,
“যারা ঘরে বসে থেকে {যুদ্ধে না গিয়ে তারেদ {যোদ্ধা} ভাইদেরকে বলে, আমাদের কথা মতো যদি তারা চলতো। তবে তারা নিহত হতো না। [আল-ইমরান . ১৬৮]
৩। সহীহ বুখারীতে আয়েশা রাদি. হবে বর্ণিত আছে, রসুল সাঃআঃ এরশাদ করিয়াছেন,
“যে জিনিস তোমার উপকার সাধন করবে, তার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, আর কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করো না। যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তবে এ কথা বলো না, ‘যদি
আমি এরকম করতাম, তাহলে অবশ্যই এমন হতো’। বরং তুমি এ কথা বলো, ‘আল্লাহ যা তাকদীরে রেখেছেন এবং যা ইচ্ছা করিয়াছেন তাই হয়েছে। কেননা ‘যদি’ কথাটি শয়তানের জন্য কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়।” [বুখারি]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। সুরা আল- ইমরানের ১৫৪ নং আয়াত এবং ৬৮ নং আয়াতের উল্লে-খিত অংশের তাফসির।
২। কোন বিপদাপদ হলে ‘যদি’ প্রয়োগ করে কথা বলার উপর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা।
৩। শয়তানের {কুমন্ত্রণামূলক} কাজের সুযোগ তৈরীর কারণ।
৪। উত্তম কথার প্রতি দিক নির্দেশনা।}
৫। উপকারী ও কল্যাণজনক বিষয়ে আগ্রহী হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা।
৬। এর বিপরীত অর্থাৎ ভাল কাজে অপারগতা ও অক্ষমতা প্রদর্শণের উপর নিষেধাজ্ঞা।

৫৮তম অধ্যায়ঃ বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ

১। উবাই ইবনে কা’ব রাদি. হইতে বর্ণিত আছে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তোমরা যদি বাতাসের মধ্যে তোমাদের অপছন্দনীয় কিছু প্রত্যক্ষ করো তখন তোমরা বলো,
“হে আল্লাহ এ বাতাসের যা কল্যাণকর, এতে যে মঙ্গল নিহিত আছে এবং যতটুকু কল্যাণ করার জন্য সে অদিষ্ট হইয়াছেততটুকু কল্যাণ ও মঙ্গল আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করি। আর এ বাতাসের যা অনিষ্টকর, তাতে যে অমঙ্গল লুকায়িত আছে, এবং যতটুকু অনিষ্ট সাধনের ব্যাপারে সে
আদিষ্ট হইয়াছেতা {অমঙ্গল ও অনিষ্ঠতা} থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই। {তিরমিজি হাদীসটিকে সহীহ বলিয়াছেন}
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। বাতাসকে গালি দেয়া নিষেধ।
২। মানুষ যখন কোন অপছন্দনীয় জিনিস দেখবে তখন কল্যাণকর কথার মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দান করবে।
৩। বাতাস আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট, একথার দিক নির্দেশনা।
৪। বাতাস কখনো কল্যাণ সাধনের জন্য আবার কখনো অকল্যাণ করার জন্য আদিষ্ট হয়।

৫৯তম অধ্যায়ঃ

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“তারা জাহেলী যুগের ধারণার মত আল্লাহ সম্পর্কে অবাস্তব ধারণা পোষণ করে। তারা বলে, ‘আমাদের জন্য কি কিছু করণীয় আছে? {হে রসুল } আপনি বলে দিন, ‘সব বিষয়ই আল্লাহর ইখতিয়ারভূক্ত।” {আল-ইমরান . ১৫৪}
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করিয়াছেন,
“তারা {মুনাফিকরা} আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তারা নিজেরাই খারাপ ও দোষের আবর্তে নিপতিত।” [আল-ফাতাহ . ৬}
প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল কাইয়্যিম বলিয়াছেন, ظن এর ব্যাখ্যা এটাই করা হইয়াছেযে, মুনাফিকদের ধারণা হচ্ছে আল্লাহ তাআলা তাঁহার রসুলকে সাহায্য করেন না। তাঁহার বিষয়টি অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। ব্যাখ্যায় আরো বলা হইয়াছেযে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর উপর যে সব বিপদাপদ এসেছে তা আদৌ আল্লাহর ফয়সালা, তাকদীর এবং হিকমত মোতাবেক হয়নি।
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও বলা হইয়াছেযে, মানুফিকরা আল্লাহর হিকমত, তাকদীর, রসুল সাঃআঃ পূর্ণাঙ্গ রিসালত এবং সকল দ্বীনের উপর আল্লাহর দীন তথা ইসলামের বিজয়কে অস্বীকার করেছে। আর এটাই হচ্ছে সেই খারাপ ধারণা যা সুরা ‘ফাতহে’ উলে¬খিত মুনাফিক ও মুশরিকরা পোষণ করতো। এ ধারণা খারাপ হওয়ার কারণ এটাই যে, আল্লাহ তাআলার সুমহান মর্যাদার জন্য ইহা শোভনীয় ছিল না। তাঁহার হিকমত প্রশংসা এবং সত্য ওয়াদার জন্যও উক্ত ধারণা ছিল বেমানান, অসৌজন্যমুলক।
যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহ তাআলা বাতিলকে হকের উপর এতটুকু বিজয় দান করেন, যাতে হক অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে, অথবা যে ব্যক্তি আল্লাহর ফয়সালা, তাকদীরের নিয়মকে অস্বীকার করে, অথবা তাকদীর যে আল্লাহর হক মহা কৌশল এবং প্রশংসার দাবীদার এ কথা অস্বীকার করে, সাথে সাথে এ দাবীও করে যে, এসব আল্লাহ তাআলার নিছক অর্থহীন ইচ্ছামাত্র; তার এ ধারণা কাফেরদের ধারণা বৈ কিছু নয়। তাই জাহান্নামের কঠিন শাস্তি এ সব কাফেরদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।
অধিকাংশ লোকই নিজেদের {সাথে সংশি¬ষ্ট} বিষয়ে এবং অন্যান্য লোকদের বেলায় আল্লাহ তাআলার ফয়সালার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা তাঁহার আসমা ও সিফাত {নাম ও গুণাবলী} এবং তাঁহার হিকমত ও প্রশংসা সম্পর্কে অবগত রয়েছে, কেবলমাত্র সেই আল্লাহর প্রতি এ খারাপ ধারণা থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
যে ব্যক্তি প্রজ্ঞা সম্পন্ন, বুদ্ধিমান এবং নিজের জন্য কল্যাণকামী, তার উচিৎ এ আলোচনা দ্বারা বিষয়টির অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি স্বীয় রব সম্পর্কে খারাপ ধারণা করে, তার উচিৎ নিজ বদ-ধারণার জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করা।
আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণকারী কোন ব্যক্তিকে যদি তুমি পরীক্ষা করো, তাহলে দেখতে পাবে তার মধ্যে রয়েছে তাকদীরের প্রতি হিংসাত্মক বিরোধীতা এবং দোষারোপ করার মানসিকতা। তারা বলে, বিষয়টি এমন হওয়া উচিৎ ছিলো। এ ব্যাপারে কেউ বেশী, কেউ কম বলে থাকে তুমি তোমার নিজেকে পরীক্ষা করে দেখো, তুমি কি এ খারাপ ধারণা থেকে মুক্ত? কবির ভাষায় .
মুক্ত যদি থাকো তুমি এ খারাবী থেকে,
বেঁচে গেলে তুমি এক মহা বিপদ থেকে।
আর যদি নাহি পারো ত্যাগিতে এ রীতি,
বাঁচার তরে তোমার লাগি নাইকো কোন গতি।
এধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১। সুরা আল- ইমরানের ১৫৪ নং আয়াতের তাফসির।
২। সুরা “ফাতাহ” এর ৬ নং আয়াতের তাফসির।
৩। আলোচিত বিষয়ের প্রকার সীমাবদ্ধ নয়।
৪। যে ব্যক্তি আল্লাহর আসমা ও সিফাত, {নাম ও গুণাবলী} এবং নিজের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত রয়েছে, কেবলমাত্র সেই আল্লাহর প্রতি কু-ধারণা পোষণ করা থেকে বাঁচতে পারে।

৬০ তম অধ্যায়ঃ তাকদীর অস্বীকারকারীদের পরিণতি

১। ইবনে ওমর রাদি. বলিয়াছেন,
“সেই সত্তার কসম, যার হাতে ইবনে ওমরের জীবন, তাদের [তাকদীর অস্বীকারীদের] কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে”। অতঃপর তিনি রসুল সাঃআঃ এর বাণী দ্বারা নিজ বক্তব্যের পক্ষে দলীল পেশ করেন,
“ঈমান হচ্ছে এই যে, তুমি আল্লাহ তাআলা, তাঁহার সমুদয় ফিরিস্তা, তাঁহার যাবতীয় {আসমানী} কিতাব, তাঁহার সমস্ত রসুল এবং আখেরাতের প্রতি
ঈমান আনয়ন করবে সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে।” [মুসলিম]
২। উবাদা বিন সামেত রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি তার ছেলেকে বললেন, “হে বৎস, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি এ কথা বিশ্বাস করবে, ‘তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটারই ছিল। আর তোমার জীবনে যা ঘটেনি তা কোনদিন তোমার জীবনে ঘটার ছিলোনা।” রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি,
“সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা যা সৃষ্টি কলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। সৃষ্টির পরই তিনি কলমকে বললেন, “লিখ”। কলম বললো, ‘হে আমার রব, ‘আমি কি লিখবো?’ তিনি বললেন, ‘কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের তাকদীর লিপিবদ্ধ করো।” হে বৎস রসুল সাঃআঃকে আমি বলতে শুনেছি,
“যে ব্যক্তি {তাকদীরের উপর} বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যু বরণ করলো, সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়।”
অন্য একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে,
“আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। এরপরই তিনি কলমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘লিখ’। কেয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সে মুহুর্তে থেকে কলম তা লিখতে শুরু করে দিল। [আহমদ]
৩। ইবনে ওয়াহাবের একটি বর্ণনা মতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করিয়াছেন,
“যে ব্যক্তি তাকদীর এবং তাকদীরের ভাল- মন্দ বিশ্বাস করে না, তাকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন করবেন।”
ইবনুদ্দাইলামী হইতে বর্ণিত আছে, কাতাদাহ রাদি. বলেন, ‘আমি ইবনে কা’ব এর কাছে আসলাম। তারপর বললাম, ‘তাকদীরের ব্যাপারে আমার মনে কিছু কথা আছে। আপনি আমাকে তাকদীর সম্পর্কে কিছু উপদেশমূলক কথা বলুন। এর ফলে হয়তো আল্লাহ তাআলা আমার অন্তর থেকে উক্ত জমাট বাধা কাদা দূর করে দিবেন। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি যদি উহুদ {পাহাড়} পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় দান করো, আল্লাহ তোমার এ দান ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাকদীরকে বিশ্বাস করবে। আর এ কথা জেনে রাখো, তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটতে কখনো ব্যতিক্রম হতো না। আর তোমার জীবনে যা সম্পর্কিত এ বিশ্বাস পোষণ না করে মৃত্যু বরণ করো, তা হলে অবশ্যই জাহান্নামী হবে’। তিনি বলেন, অতঃপর আমি আবদুল¬াহ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান এবং যায়েদ বিন ছাবিত রাদি. এর নিকট গেলাম। তাঁদের প্রত্যেকেই রসুল সাঃআঃ থেকে এরকম হাদীসই বর্ণনা করিয়াছেন।” [ হাকিম]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায় .
১। তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ফরজ এর বর্ণনা।
২। তাকদীরের প্রতি কিভাবে ঈমান আনতে হবে, এর বর্ণনা।
৩। তাকদীরের প্রতি যার ঈমান নেই তার আমল বাতিল।
৪। যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান আনেনা সে ঈমানের স্বাদ অনুধাবন করতে অক্ষম।
৫। সর্বাগ্রে যা সৃষ্টি হইয়াছেতার উল্লেখ।
৬। কেয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সৃষ্টির পর থেকেই কলম তা লিখতে শুরু করেছে।
৭। যে ব্যক্তি তাকদীর বিশ্বাস করে না তার ব্যাপারে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম দায়িত্বমুক্ত।
৮। সালাফে সালেহীনের রীতি ছিল, কোন বিষয়ের সংশয় নিরসনের জন্য জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনকে প্রশ্ন করা।
৯। ঊলামায়ে কেরাম এমন ভাবে প্রশ্ন কারীকে জবাব দিতেন যা দ্বারা সুন্দেহ দূর হয়ে যেতো। জবাবের নিয়ম এই যে, তাঁহারা নিজেদের কথাকে শুধুমাত্র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর {কথা ও কাজের} দিকে সম্পৃক্ত করতেন।

Leave a Reply