অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান । উপদেশ হাদিস
অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান । উপদেশ হাদিস , এই অধ্যায়ে মোট (৭-১৪) =৮টি হাদীস >> উপদেশ হাদিস এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-২ঃ অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হতে সাবধান
পরিচ্ছেদঃ অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান
৭. ইবনি ওমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, [ক্বিয়ামতের দিন] আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে নিজের নিকটবর্তী করবেন এবং আল্লাহ্ তাআলা নিজ বাজু তার উপরে রেখে তাকে ঢেকে নিবেন। অতঃপর আল্লাহ্ সেই বান্দাকে বলবেন, আচ্ছা! বল দেখি, এই গোনাহটি তুমি করেছ কি? এই গোনাহটি সম্পর্কে তুমি অবগত আছ কি? সে বলবে হ্যাঁ, হে আমার রব! আমি অবগত আছি। শেষ পর্যন্ত এক একটি করে তার কৃত সমস্ত গোনাহের স্বীকৃতি আদায় করবেন। এদিকে সে বান্দা মনে মনে এই ধারণা করিবে যে, সে এই সমস্ত অপরাধের কারণে নির্ঘাত ধ্বংস হইবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, দুনিয়াতে আমি তোমার এই সমস্ত অপরাধ ঢেকে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিবো। অতঃপর তাকে নেকীর আমলনামা দেওয়া হইবে। আর কাফের ও মুনাফিকদেরকে সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখে আনয়ন করা হইবে এবং উচ্চস্বরে এই ঘোষণা দেওয়া হইবে- এরা তারা, যারা স্বীয় পরওয়ারদিগারের বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করত। জেনে রাখ, এই সমস্ত যালিমদের উপর আজ আল্লাহর লানত
[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মেশকাত হাদিস/৫৫৫১; বঙ্গানুবাদ মেশকাত হাদিস/৫৩১৭]। অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৮, আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে ছিলাম, হঠাৎ তিনি হাসলেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কি জান আমি কেন হাসছি? আমরা বললাম, আল্লাহ্ এবং তাহাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বলিলেন, ক্বিয়ামতের দিন বান্দা যে তার রবের সাথে কথা বলবে, সেই কথাটি স্মরণ করে হাসছি। বান্দা বলবে, হে রব! তুমি কি আমাকে যুলম হইতে নিরাপত্তা দান করনি? আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ, তখন বান্দা বলবে, আজ আমি আমার সম্পর্কে আপনজন ব্যতীত আমার বিরুদ্ধে অন্য কারও সাক্ষ্য গ্রহণ করব না। তখন আল্লাহ বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হিসাবে এবং কিরামান-কাতেবীনের সাক্ষ্যই তোমার জন্য যথেষ্ট। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা তার মুখের উপর মোহর লাগিয়ে দিবেন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হইবে, তোমরা কে কখন কি কি কাজ করেছো বল। তখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ তাদের কৃতকর্মসমূহ প্রকাশ করে দিবে। এরপর তার মুখকে স্বাভাবিক অবস্থায় খুলে দেওয়া হইবে। তখন সে স্বীয় অঙ্গসমূহকে লক্ষ্য করে আক্ষেপের সাথে বলবে, হে দুর্ভাগা অঙ্গসমূহ! তোরা দূর হ! তোদের ধ্বংস হৌক! তোদের জন্যই তো আমি আমার রবের সাথে ঝগড়া করেছিলা
ম [মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৫৫৫৪; বঙ্গানুবাদ মেশকাত হাদিস/৫৩২০]। অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
ছাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের রবকে দেখিতে পাব? তিনি বলিলেন, দ্বিপ্রহরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখিতে কি তোমাদের মধ্যে পরস্পরে বাধা সৃষ্টি হয়? তারা বলিলেন, না। তিনি আরও বলিলেন, মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার রাত্রে পূর্ণ চাঁদ দেখিতে কি তোমাদের কোন প্রকারের অসুবিধা হয়? তারা বলিলেন, না। অতঃপর তিনি বলিলেন, সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এই দুটির কোন একটিকে দেখিতে তোমাদের যেই পরিমাণ অসুবিধা হয়, সেই দিন তোমাদের রবকে দেখিতে সেই পরিমাণ অসুবিধাও হইবে না। এরপর রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তখন আল্লাহ তাআলা কোন এক বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে মর্যাদা দান করিনি? আমি কি তোমাকে সর্দারী দান করিনি? আমি কি তোমাকে বিবি দান করিনি? আমি কি তোমার জন্য ঘোড়া ও উটকে অনুগত করে দেয়নি? আমি কি তোমাকে এই সুযোগ দেয়নি যে, তুমি নিজ সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিবে এবং তাদের নিকট হইতে এক-চতুর্থাংশ মাল ভোগ করিবে? জবাবে বান্দা বলবে, হ্যাঁ, [হে আমার প্রতিপালক!]। অতঃপর রাসূল [সাঃআঃ] বলেন, তখন আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বলিলেন, আচ্ছা বল দেখি, তোমার কি এই ধারণা ছিল যে, তুমি আমার সাক্ষাৎ লাভ করিবে? বান্দা বলবে, না। এইবার আল্লাহ বলবেন, [দুনিয়াতে] তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে আজ আমিও [আখেরাতে] অনুরূপভাবে তোমাকে ভুলে থাকব। [অর্থাৎ তোমাকে আযাবে লিপ্ত রাখব]। অতঃপর আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন, সেও অনুরূপ বলবে। তারপর তৃতীয় এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাকেও অনুরূপ কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার প্রতি, তোমার কিতাবের প্রতি এবং তোমার সমস্ত নবীগণের প্রতি ঈমান এনেছি, ছালাত আদায় করেছি, ছিয়াম পালন করেছি এবং দান-ছাদাক্বা করেছি। মোটকথা, সে সাধ্য পরিমাণ নিজের নেক কার্যসমূহের একটি তালিকা আল্লাহর সম্মুখে তুলে ধরব। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আচ্ছা! তুমি তো তোমার কথা বললে, এখন এখানেই দাঁড়াও, এক্ষুণি তোমার ব্যাপারে সাক্ষী উপস্থিত করছি। এই কথা শুনে বান্দা মনে মনে চিন্তা করিবে, এমন কে আছে যে, এখানে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে?
অতঃপর তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেওয়া হইবে এবং তার রানকে বলা হইবে, তুমি বল, তখন তার রান, হাড়, মাংস প্রভৃতি এক একটি করে বলে ফেলবে, এরা যা যা করেছিল। তার মুখে মোহর লাগিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হইতে এই জন্য সাক্ষী গ্রহণ করা হইবে, যেন সেই বান্দা কোন ওযর-আপত্তি পেশ করিতে না পারে। বস্তুতঃ যেই বান্দার কথা আলোচনা করা হয়েছে, সে হল মুনাফিক এবং এই কারণেই আল্লাহ তার প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হইবেন
[মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৫৫৫৫; বঙ্গানুবাদ মেশকাত হাদিস/৫৩২১]। অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১০. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন এমন এক ব্যক্তিকে জনসম্মুখে উপস্থিত করা হইবে, যার আমলনামা খোলা হইবে নিরানব্বই ভলিয়মে এবং প্রতি ভলিয়ম বিস্তীর্ণ হইবে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি এর কোন একটিকে অস্বীকার করিতে পারবে? অথবা আমার লিখক ফেরেশতাগণ কি তোমার প্রতি যুলুম করেছে? সে বলবে, না। হে আমার রব্ব! আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেন, তবে কি তোমার পক্ষ হইতে কোন ওযর পেশ করার আছে? সে বলবে, না; হে আমার রব! তখন আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ, তোমার একটি নেকী আমার নিকট রক্ষিত আছে। তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ, আজ তোমার প্রতি কোন যুলুম বা অবিচার করা হইবে না। এরপর এক টুকরা কাগজ বের করা হইবে, যাতে লিখা আছে, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ {অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ, [মাবূদ] নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দা ও রাসূল}। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার আমলের ওযন দেখার জন্য উপস্থিত হও। তখন সে বলবে, হে আমার রব! ঐ সমস্ত বিরাট বিরাট দফতরের মুকাবিলায় এই এক টুকরা কাগজের মূল্যই বা কি আছে? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার উপর কোন অবিচার করা হইবে না। নবী করীম [সাঃআঃ] বলেন, অতঃপর ঐ সমস্ত দফতরগুলি এক পাল্লায় এবং এই কাগজের টুকরাখানি আরেক পাল্লায় থাকিবে। কাগজের টুকরা যে পাল্লায় থাকিবে তা ভারী হয়ে নীচের দিকে ঝুঁকে থাকিবে। মোটকথা, আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন জিনিস ওযনই হইতে পারবে না
[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ, মেশকাত হাদিস/৫৫৫৯; বাংলা মেশকাত হাদিস/৫৩২৪]।অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১. আদী ইবনি হাতেম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মধ্যে কোন দোভাষী এবং এমন কোন পর্দা থাকিবে না, যা তাকে আড়াল করে রাখবে। সে তার ডানে তাকাবে, তখনও পূর্বে প্রেরিত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাবে না। আবার বামে তাকাবে, তখনও পূর্ব প্রেরিত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাবে না। আর সম্মুখের দিকে তাকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাবে না। যা একেবারে চেহারার সম্মুখে অবস্থিত। সুতরাং খেজুর ছালের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হইতে বাঁচতে চেষ্টা কর
[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মেশকাত হাদিস/৫৫৫০; বঙ্গানুবাদ মেশকাত হাদিস/৫৩১৬]। অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! সেই সময় পর্যন্ত ক্বিয়ামত কায়েম হইবে না যে পর্যন্ত না হিংস্র পশু মানুষের সাথে কথা বলবে এবং যে পর্যন্ত না কারও চাবুক তার সাথে কথা বলবে, তার জুতার ফিতা তার সাথে কথা বলবে। আর তার উরু তাকে জানিয়ে দিবে যে, তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী কি করেছে
[তিরমিজি, বাংলা মেশকাত হাদিস/৫২২৫]। অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩. বাহয ইবনি হাকিম তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
বাহয ইবনি হাকিম তার পিতার মধ্যস্থতায় বর্ণনা করেন, তার দাদা বলেন, নবী কারীম [সাঃআঃ] বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে মুখ বন্ধ করে ডাকা হইবে। সেদিন তোমাদের মুখ বন্ধ থাকিবে। সর্বপ্রথম তোমাদের উরু এবং কাধকে জিজ্ঞেস করা হইবে
[নাসাঈ, ইবনি কাছীর হাদিস/৫৬৬৯]। অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪. উকবা ইবনি আমের [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মানুষের যখন মুখ বন্ধ থাকিবে, তখন তার বাম উরুর হাড় সর্বপ্রথম কথা বল
বে [ইবনি কাছীর ৫৬৭১]। অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হইতে সাবধান -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply